রানির মৃত্যুর পর তার পোশাক ও বহুমূল্য অলঙ্কারের উত্তরাধিকার কে হবেন তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়েছে কৌতুহল।
ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের গয়না ও পোশাকের বেশিরভাগটাই পাবেন নাত বউ প্রিন্সেস অব ওয়েলস কেট মিডলটন, তবে রাজা তৃতীয় চার্লসের স্ত্রী কুইন কনসোর্ট ক্যামিলা পার্কারই পাবেন বেছে নেওয়ার প্রথম সুযোগ।
দ্য টাইমসের এক প্রতিবেদন বলছে, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ব্যক্তিগত সংগ্রহে বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কারের সংখ্যা তিনশর মত।
এর মধ্যে ৯৮টি ব্রোজ, ৪৬টি নেকলেস, ৩৪ জোড়া কানের দুল, ১৫টি আংটি, ১৪টি ঘড়ি এবং পাঁচটি বহুমূল্য দুল রয়েছে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ৯৬ বছর বয়সে মারা যান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রাজকীয় শেষকৃত্য শেষে গত ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উইন্ডসর ক্যাসেলের মাঠে সেইন্ট জর্জেস চ্যাপেলে তাকে শায়িত করা হয়।
প্রয়াত রানি এলিজাবেথ ও তার স্বামী প্রিন্স ফিলিপ চার সন্তান রেখে গেছেন। তারা হলেন রাজা তৃতীয় চার্লস, প্রিন্সেস অ্যান, প্রিন্স অ্যান্ডু ও প্রিন্স এডওয়ার্ড।
নাতি-নাতনি আছেন আট জন, আর প্রপৌত্র ও পৌত্রীর সংখ্যা ১২ জন। তৃতীয় চার্লস রাজা হওয়ার পরে ব্রিটিশ সিংহাসের উত্তরাধীকারীর তালিকার এক নম্বরে রয়েছেন তার বড় ছেলে প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়াম।
ব্রিটেনের ম্যাজেস্টি ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ইনগ্রিড সিওয়ার্ডকে উদ্ধত করে ডেইলি মেইল লিখেছে, ধারণা করা হচ্ছে রানির গয়না তার পরিবারের সদস্যরাই পাবেন। তবে রানির এমন কিছু বিশেষ অলঙ্কার আছে যা বর্তমান রাজার স্ত্রীর ব্যবহার করার কথা। সেক্ষেত্রে প্রশ্নাতীতভাবে আসে চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলার নাম। তার পদবি কুইন অব কনসোর্টের সম্মান রাখতেও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
রানি এলিজাবেথকে বলা হয় ফ্যাশন ‘আইকন’। জীবনভর হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঝুলের গাঢ় বা হালকা রঙের পোশাক, বুক পকেটে ব্রোচ, তার সঙ্গে মিলিয়ে হ্যাট, কখনও কখনও হেডস্কার্ফ এবং মাঝারি আকৃতির ভ্যানিটি ব্যাগ, হাতে দাস্তানা ও দুই ইঞ্চি হিলের জুতা পরে অভিজাত এক স্বকীয় ফ্যাশনকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন তিনি।
রানির প্রভাবে রাজবধূ কেট মিডলটন বা মেগান মার্কেলদেরও এক রঙা পোশাকে দেখা গেছে রাজকীয় নানা অনুষ্ঠানে।
আর রানির বহুমূল্য গয়না প্রীতির কথাতো বিশ্ববিদিত। নীলকান্তমণি ও পাঁচটি হিরার ক্লাস্টার অ্যালবার্ট ব্রোচ শেষ পর্যন্ত রানির প্রিয় গয়নাগুলোর মধ্যে ছিল।
মুকুটের কোহিনূর ছাড়াও হায়দরাবাদের নিজামের উপহার দেওয়া তিনশো হীরার নেকলেস ও টায়রা, সৌদি আরবের বাদশাহর কাছ থেকে পাওয়া হীরার নেকলেস, দ্য স্টেট ডায়ডেম নামের হীরার মুকুট এবং কানের দুল ও গলার হার রয়েছে এই তালিকায়।
রানির মৃত্যুর পর শোকের আবহের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছিল, রানির মুকুটের আলো ছড়ানো কোহিনূর এখন কার মাথায় শোভা পাবে। ব্রিটিশ রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী, সিংহাসনে বসা রানিরা কোহিনূর মুকুটে পরেন। সেই অনুযায়ী রানি এলিজাবেথের মাথায় এতোদিন কোহিনূরকে দেখা গেছে।
ডেইলি মেইল লিখেছে, রাজা চার্লসের স্ত্রী হিসেবে ক্যামিলার মাথায় উঠবে কোহিনূরের মুকুট। বছরের গোড়ার দিয়ে রানি ঘোষণা করেছিলেন, চার্লস সিংহাসনের বসার পর ডাচেস অব কর্নওয়াল অর্থাৎ চার্লসের স্ত্রী কুইন অব কনসোর্ট হবেন ক্যামিলা, সে অনুযায়ী ক্যামিলাই ওই মুকুটের উত্তরাধিকারী।
ক্যামিলার পাশাপাশি কেট মিডলটনের নামও এখানে আসছে, কারণ তিনি রাজা চার্লসের বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়ামের স্ত্রী, ভবিষ্যতে ক্যামিলার জায়গাটি তারই।
যে গয়নাগুলো এক সময় অলংকৃত করত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে, তার শবযাত্রায় তার কয়েকটি পরে অংশ নিতে দেখা গেছে নাতবউ কেট মিডলটনকে।
শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে কেটের গলায় যে মুক্তার হার আর কানে যে মুক্তার দুল দেখা গেছে, এক সময় রানি নিজেই সেগুলো পরতেন।
রাজ পরিবার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিস রস জানান, কিছু পোশাকে হাত দেওয়া হবে না। যেমন রানির বিয়ের পোশাক, রাজ্যাভিষেকের গাউন – এসব ঐতিহাসিক বিবেচনায় সংরক্ষণ করা হবে এবং প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে। রানি ভিক্টোরিয়া এবং প্রয়াত রাজবধূ প্রিন্সেস ডায়ানার বেশ কিছু পোশাক একইভাবে সংরক্ষণে রেখেছে রাজ পরিবার।
এই বিশেষজ্ঞেরও ধারণা, রানির গয়না ও পোশাক তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যেই মর্যাদা অনুযায়ী বণ্টন করে দেওয়া হবে।
রস বলেন, “রানির অনেক গাউন নাতবউ কেট, নাতনি প্রিন্সেস ব্রিয়েটিস ও প্রিন্সেস ইউজেনি (রানির ছেলে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর দুই মেয়ে) এবং নাতি প্রিন্স উইলিয়ামের মেয়ে প্রিন্সেস শার্লট, প্রিন্স হ্যারির মেয়ে লিলিবেটের জন্য রাখা হতে পারে।
আবার রানির অনেক সম্পত্তি যেমন ব্যক্তিগত মালিকানার বদলে ট্রাস্টে রাখা হয়, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ অলঙ্কারও সেভাবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হতে পারে।
রাজপরিবারের জীবনীকার ব্রায়ান হোয়ে এর আগে তার বইয়ে লিখেছিলেন, রানিও বিভিন্ন সময়ে তার পোশাক দান করেছেন কাছের মানুষদের। সেক্ষেত্রে নিয়ম ছিল, যদি কেউ রানির ব্যবহৃত পোশাকটি বিক্রি করতে চান, সেক্ষেত্রে সেটি যে রানির পোশাক ছিল, সেই তথ্য গোপন রাখতে হবে।