সাফজয়ী মাসুরা এবার মোটর ভ্যান কিনে দেবেন বাবাকে

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সোমবার ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ জেতেন সাবিনা খাতুনরা। এরপর থেকেই সারা দেশ বইছে আনন্দধারা।

যারা এই শিরোপাজয়ের কুশীলব, তাদের পরিবারে আনন্দের মাত্রাটা যেন একটু বেশিই। ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীনের পরিবারও ভাসছে তেমন আনন্দেই।

তার মা ফাতেমা খাতুন তার কঠোর পরিশ্রম, চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞাটা দেখেছেন খুব কাছে থেকে। তার আনন্দের মাত্রাটা তাই একটু বেশিই। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ভ্যান চালক। তার সামান্য আয়ে আমাদের সংসার চলাতে হিমশিম খেতে হয়। এর মধ্য থেকেও মাসুরা ধীরে ধীরে ভাল ফুটবল খেলতে শুরু করে। প্রথম দিকে এলাকার লোকজনের রোষানলে পড়লেও ধীরে ধীরে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হতে শুরু করে। একটি সময়ে প্রতিবেশীরা মাসুরাকে উৎসাহ দিতে শুরু করে। তার ভাল খেলার ধারাবাহিকতায় জাতীয় পর্যায়ে খেলত পারে। সর্বশেষ সাফ জয় করে দেশের মুখ উজ্জল করেছে। এমন সাফল্যে দেশের ইতিহাস আরও উজ্বল হয়েছে। দেশের জয় হয়েছে আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই আমার।’

ফাতেমা অন্যদের অবদানকেও ভুলে গেলেন না এই আনন্দের দিনে। বললেন, ‘আমার মেয়ে জীবনে অনেক পরিশ্রম সংগ্রাম করে এত দূর এসেছে। তার সাফল্যের পিছনে যাদের অবদান আছে, সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ।’ এদিকে মাসুরার এমন সাফল্য প্রতিবেশীদের আনন্দ উৎসবের উপলক্ষ এনে দিয়েছে রীতিমতো। জেলার বিভিন্ন সংগঠন প্রতিমুহূর্তে মাসুরার বাড়িতে এসে তার বাবা-মাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

মাসুরার বাবা রজব আলী সাতক্ষীরা সদরের বিনেরপোতা এলাকার বাসিন্দা। পেশায় একজন ভ্যানচালক। মেয়ের এমন সাফল্যে তার মুখ উজ্জ্বল হয়েছে বলে জানান তিনি। মাসুরার বাবা রজব আলী জানান, ‘মাসুরা প্রথমদিকে যখন ফুটবল খেলা শুরু করে অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে তবু সে খেলা বন্ধ করেনি। ধীরে ধীরে ভালো খেলার সুবাদে জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পেয়েছে সে। সব শেষ সাফ জয়ের এই সাফল্য… এবার মাসুরা বাড়িতে এসে একটি মোটর ভ্যান কিনে দেবে।’

তিনি আরও জানান, ‘মাসুরা ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্টে বড় হয়েছে। কখনো খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে দিন কেটেছে তবুও খেলার প্রতি একনিষ্ঠ আগ্রহ আজকে এই জয় এনে দিয়েছে তাকে।’

সরকারের কাছে দাবি রেখে তিনি হলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া সামান্য একটু জায়গায় কোন রকমে মাথা গুঁজে আছি। সরকারের পক্ষ থেকে একটা বাড়ির ব্যবস্থা করলে আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু থাকবে না।’

জাহিদা নামে মাসুরার এক প্রতিবেশী জানান, তার এমন সাফল্যে তার প্রতিবেশীরা গর্ববোধ করছেন। এমন সাফল্য অব্যাহত থাকবে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে এমনটাই দাবী তাদের।

প্রসঙ্গগত, এদিকে সাবিনা ও মাসুরা জেলায় আসার পরে তাদের সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই সংশ্লিষ্ট একটি বৈঠক হয়েছে।

বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবি জানান, ‘দুই কৃতি ফুটবলার ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা আসার পরে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদের সুবিধামতো দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে। সে বিষয়ে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে।’