হিজাব আইন লঙ্ঘনের অপরাধে পুলিশের হাতে আটক এক তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে ইরানে। আর এই বিক্ষোভ-প্রতিবাদের বড় অংশে থাকছেন নারীরাই।
ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর সারিতে বিক্ষোভের পঞ্চম দিনে হিজাবে আগুন দিতে দেখা গেছে নারীদের। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বাকিরা তখন উল্লাস করেন।
অনলাইনে তেহরানের কিছু ভিডিওতে দেখা যায়- নারীরা তাদের হিজাব খুলে ফেলছেন ও স্লোগান দিচ্ছেন- স্বৈরশাসক মুর্দাবাদ। ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে উদ্দেশ করেই এ স্লোগান দেওয়া হয়। এছাড়া বিচার চাই, স্বাধীনতা চাই, হিজাব পরতে বাধ্য করা যাবে না স্লোগানও দিতে দেখা যায়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক নারী বিবিসির কাছে কিছু ছবি পাঠিয়েছেন, যেখানে তিনি দাবি করেছেন, দাঙ্গা পুলিশ তাকে পিটিয়ে আহত করেছে। তিনি বলেন, পুলিশ ক্রমাগতভাবে টিয়ার গ্যাস ছুড়ছিল। আমাদের চোখ জ্বলে যাচ্ছিল। আমরা পালিয়ে যাচ্ছিলাম, পুলিশ তখন আমাদের ঘিরে ফেলে পেটায়। তারা বলে আমি যৌনকর্মী, শরীর বিক্রির জন্য আমি রাস্তায় নেমেছি।
তেহরানের গভর্নর মঙ্গলবার এক টুইটে লিখেছেন অস্থিরতা তৈরির জন্য সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে এ বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করা হচ্ছে। আর ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি বলছে, আমিনির মৃত্যুকে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, উরমিয়া, পিরানশাহর এবং কেরমানশাহতে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত যে তিন জন নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে এক নারীও রয়েছেন।
উল্টোদিকে কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে তারা কেরমানশাহে দু’জন সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সিরাজে একজন পুলিশ সহকারীকে হত্যা করেছে।
হিজাব না পরার অপরাধে পুলিশি নির্যাতনে মাশা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যুর পর শুরু হওয়া বিক্ষোভে এ পর্যন্ত সাত জনের মৃত্যুর কথা জানা যাচ্ছে। তিন দিন কোমায় থাকার পর ২২ বছর বয়সী এই কুর্দিশ তরুণী শুক্রবার মারা যান।
ইরানের নৈতিকতা পুলিশ যখন মাশা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে তখন তিনি তেহরানে তার ভাইয়ের সাথে ছিলেন। হিজাব ও বোরকা না পরে বাড়ির বাইরে বের হওয়ায় অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে একটি ডিটেনশন সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তিনি পড়ে যান ও কোমায় চলে যান।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ বলেছেন, পুলিশ আমিনির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে এবং তাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে একটি গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে মাথায় আঘাত করে।
তবে পুলিশ দাবি করছে এই তরুণীকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি। বরং হঠাৎ হার্ট ফেইল করে তার। কিন্তু আমিনির পরিবার বলছে, তিনি একেবারে সুস্থ ছিলেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাশা আমিনি
নাদা আল-নাশিফ আরও বলছেন, ইরানে সম্প্রতি যারা হিজাব আইনে মানতে কিছুটা শৈথিল্য দেখাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় টহল জোরদার করেছে নৈতিকতা পুলিশ। নারীদের বিরুদ্ধে সহিংস আচরণের বহু ভিডিও এরইমধ্যে হাতে এসেছে জাতিসংঘের।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একজন সহযোগী সোমবার আমিনির পরিবারের সাথে দেখা করেছেন এবং তাদের বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।
দেশটির সিনিয়র এমপি জালাল রশিদি কুচি প্রকাশ্যে নৈতিকতা পুলিশের সমালোচনা করে বলেছেন, এ বাহিনী ইরানের শুধু ক্ষতিই করছে।