দুর্নীতিতে নাম, তবু দুদকের দূত হিসেবে বহাল সাকিব আল হাসান

বড়সড় দুর্নীতিতে জড়িয়েছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম। জুয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি এবং শেয়রবাজার কারসাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। তবুও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শুভেচ্ছাদূত হিসেবে বহালই আছেন সাকিব। তার সঙ্গে এখনো চুক্তি বাতিল করেনি রাষ্ট্রের দুর্নীতি দমনকারী প্রতিষ্ঠানটি।

এ নিয়ে নানা মহলে নানা ফিসফাস। অনেকে বলছেন, সাকিব আল হাসানের অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনায় যেখানে তদন্ত করার কথা দুদকের, সেখানে উল্টো প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ দূত হিসেবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এই ক্রিকেটার। এমন পরিস্থিতিতে সাকিবকে নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশন।

২০১৮ সালে দুদকের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন বাংলাদেশি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান। বিশ্বব্যাপী সমাদ্রিত এই ক্রিকেটার তখন বিনা পারিশ্রমিকে দুদকের কয়েকটি বিজ্ঞাপনও করেন। সেই বিজ্ঞাপনে তিনি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার বার্তা দেন। কেউ দুর্নীতি করলে সেই তথ্য দুদককে জানানোর কথাও বলেন।

অথচ এখন সেই সাকিব আল হাসানের নামই জড়িয়ে পড়েছে বড়সড় দুর্নীতিতে। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার কথা বললেও একটি জুয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজেই চুক্তি করেন সাকিব। গত ২ আগস্ট সে কথা ফেসবুকে প্রকাশও করেন। অথচ বাংলাদেশের আইনে জুয়া এবং এ সংক্রান্ত যেকোনো চুক্তি বেআইনি। পরে নানা বিতর্কের মাঝে সেই চুক্তিটি বাতিল করেন বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার।

সেই বিতর্কের রেশ না কাটতেই শেয়ার কারসাজির অভিযোগ ওঠে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে আসে, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সাতটি কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি করে একটি চক্র ১৩৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সেই চক্রের অন্যতম সদস্য সাকিব আল হাসান।

শুধু তাই নয়, স্বর্ণ ব্যবসার মতো নানা আর্থিক কর্মকাণ্ডে অনেক বড় পরিসরে জড়িয়েছেন বিশ্বসেরা এই ক্রিকেটার। এর মধ্যে কোনো কোনোটিতে জড়িয়েছেন বিতর্কিত উপায়ে। এত কিছুর পরও তিনি কীভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে বহাল আছেন, এমন প্রশ্ন নানা মহলে।

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে শুভেচ্ছাদূত সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভাল করতেন দুদকের পরিচালক নাসিম আনোয়ার। বর্তমানে তিনি অবসরে আছেন। সাকিবের সঙ্গে চুক্তি বাতিল বিষয়ে দুদকের সাবেক এই কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘চুক্তি বাতিল করতে চাইলে আগে সাকিব এবং দুদক উভয় পক্ষ একে অপরকে জানাতে হবে।’

চুক্তির নিয়ম এবং সময় সম্পর্কে নাসিম আনোয়ার বলেন, ‘এই চুক্তির কোনো টাইম লিমিট ছিল না। এটা ছিল যে, কোনো পক্ষ চাইলে তিন মাসের সময় দিয়ে চুক্তিটি ক্যানসেল করতে পারে। উভয় পক্ষেরই এই স্বাধীনতাটা ছিল।’

এ ব্যাপারে ঢাকা টাইমস-এর সঙ্গে আলাপকালে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, ‘দুদকের দূত হয়ে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন সাকিব। শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে সাকিবের নাম জড়িয়েছে। যদিও অভিযোগ এখনো প্রমাণিত না, তবু বিষয়টা দৃষ্টিকটূ। তাই আমি মনে করি, যে চুক্তিটা আছে সেটি সাসপেন্ড করা উচিত। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে উভয় যেন এ ধরণের চুক্তি থেকে বিরত থাকে।’

এদিকে সাকিব-কাণ্ডে দুদকের দায়িত্বশীল কেউ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক দুই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, ‘সাকিব আল হাসানের এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে তারা বিব্রত।