হিসাব কষে ছবি আঁকেন রাবি শিক্ষার্থী মিথুন

একজন শিল্পী রং আর তুলির মাধ্যমে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেন মনোমুগ্ধকর সব চিত্র। সেটা হতে পারে যেকোনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বা কারো ছবি। কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তির যুগে রঙ আর তুলির ব্যবহার ছাড়াও ছবি আঁকা যায়। ডিজিটাল আর্টের মাধ্যমে কম্পিউটার ব্যবহার করে ফুটিয়ে তোলা যায় নানান চিত্র। কিন্তু কখনো কি শুনেছেন ম্যাথমেটিক্যাল ইকুয়েশকে (গাণিতিক সমীকরণ) কাজে লাগিয়ে ছবি আঁকানোর কথা। ম্যাথমেটিক্যাল ইকুয়েশনকে কাজে লাগিয়ে দৃষ্টিনন্দন সব ছবি আঁকেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ‘মিথুন কুমার দে’।

বাংলাদেশের মাত্রচিত্র, স্মৃতিসৌধ, ফুটবলার রোনালদো, মেসি, ডেভিড ব্যাকহাম, ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার, এমএস ধোনি, অভিনেতা শাহরুখ খান, কাজল, ক্যাটরিনা কাইফ, চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গায়ক মাইকেল জ্যাকসন কিংবা জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র সিসিমপুরের ইকরি, হালুম, টুকটুকিসহ যে কারো ছবি গাণিতিক হিসাব কষে কিংবা ডিজিটাল আর্ট ব্যবহার করে আঁকতে পারেন মিথুন। এসব ছবি আঁকার ক্ষেত্রে ডেসমস অ্যাপ এবং ডিজিটাল আর্ট ব্যবহার করেন তিনি।

শুরুর গল্প সম্পর্কে মিথুন জানান, করোনা মহামারিতে বন্ধ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অন্য আট দশজন শিক্ষার্থীর মতোই তারও অবসর সময় কাটে ফেসবুকে। হঠাৎ একদিন তার ফোনের স্কীনে আসে ম্যাথমেটিক্যাল ইকুয়েশন ব্যবহার করে আঁকা টেনিস তারকা সানিয়া মির্জার একটি স্কেচ। সেই থেকে আগ্রহ জন্মে এরকম স্কেচ আঁকানোর। শুরু করেন ঘাটাঘাটি। এই বিষয়ে অনলাইনেও পাননি তেমন কোনো তথ্য। শুধু জানতে পারেন ডেসমস অ্যাপ ব্যবহার করে এরকম চিত্র আঁকা যায়। সেই থেকে শুরু, এখন ম্যাথমেটিক্যাল ইকুয়েশনকে কাজে লাগিয়ে আঁকতে পারেন যেকোনো ধরনের ছবি।

মিথুন বলেন, ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ ছিল। উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে। আমি সব সময় চাইতাম ম্যাথমেটিকস এবং ছবি বা স্কেচ কিভাবে এগুলো একসঙ্গে করা যায়। আমি তখনো জানতাম না কিভাবে করা যায়। একটি আর্ট আমার আগ্রহ বাড়িয়েছে। সেই আগ্রহ থেকেই সফল হয়েছি। এখন ম্যাথমেটিক্যাল ইকুয়েশনের মাধ্যমে যেকোনো স্কেচ আঁকতে পারি। ভালো লাগার জায়গা থেকেই অটোডেস্ক স্কেচবুক ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকি। ডিজিটাল আর্টেও রয়েছে পারদর্শিতা।

মিথুন জানান, এই ধরনের আর্ট খুব কম মানুষ করে থাকেন। তাই তেমন কোনো টিউটোরিয়াল পায়নি। প্রায় ছয় মাস ধরে ডেসমস অ্যাপটি ব্যবহার করেন। বিভিন্ন ইকুয়েশন নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন। অনেক চেষ্টার পর প্রথমে শুধুমাত্র একটি সরলরেখা ব্যবহার করে স্কেচ আঁকেন। এরপর ওই আর্টটি তার ফেসবুকে শেয়ার করেন। বেশ সাড়া ফেলেছিল তার স্কেচটি। তারপর থেকেই সবধরনের ইকুয়েশন ব্যবহার করে ছবি/পোর্ট্রেট আঁকা শুরু করেন। এখন তিনি বিল্ডিং থেকে শুরু করে মানুষের স্কেচও আঁকতে পারেন।

মিথুন বলেন, বাংলাদেশে খুব কম সংখ্যক মানুষ রয়েছে যারা এমন কাজ করেন। কারণ এটা খুবই সময় সাপেক্ষ বিষয়। কারণ এখানে প্রত্যেকটা ইকুয়েশন ধরে ধরে কাজ করতে হয়। এক একটা ডেসমস আর্ট করতে আমার প্রায় ১৬-২০ ঘণ্টার মতো সময় লাগত। এই ধরণের কাজগুলো খুবই ধৈর্য সহকারে করতে হয়। যদি কারো ধৈর্য কম থাকে তার জন্য এই আর্ট করা খুবই কষ্টকর

শুধু ছবি আঁকায় নয় গান করা, বাদ্যযন্ত্রও বাজাতে পারেন মিথুন। গিটার আর হারমনিকা বা মাউথ অর্গানিকা বাজাতে পারেন। তবে দুইটা একসঙ্গে বাজানো শিখছেন। তার ‘The Data Artist’ নামে একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে। কেউ চাইলে এখানে যোগাযোগ করে যেকোনো ধরনের ছবি এঁকে নিতে পারেন।

মিথুনের এই অসাধারণ পারদর্শিতার বিষয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. গোলাম হোসাইন বলেন, আমি প্রথম যখন তার স্কেচগুলো দেখি তখন সত্যিই অভিভূত হই। ম্যাথমেটিক্সের ইকুয়েশনকে কাজে লাগিয়ে যেকোনো স্কেচ আঁকা আসলেই অনেক কঠিন কাজ

তিনি আরো বলেন, সারা পৃথিবীতে এধরনের কাজ খুব অল্প সংখ্যক মানুষ করে থাকেন। আমার জানা মতে মিথুন বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যক্তি যে এই কাজটা করে। আমি তার সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ কামনা করি এবং সে তার শিল্পকর্মের মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাক সেই প্রার্থনা করি। তার মাধ্যমে পরিসংখ্যান একদিন শিল্পে রূপান্তরিত হবে তা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।