অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জ আমার জন্য, যেটা আমি উপভোগ করতে চাই: সোহান

আসন্ন জিম্বাবুয়ে সফরের টি-২০ সিরিজে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান। এক সিরিজে নেতৃত্ব পেলেও এর উপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই। এই ফরম্যাটে কোনোভাবেই সাফল্য পাচ্ছে না টাইগাররা। ভালো করতেই সোহানের কাঁধে দায়িত্ব তুলে দিয়েছে বিসিবি। রোববার মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া কক্ষে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথমবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সোহান।

সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরের পাশাপাশি বর্তমান টি-২০ দল নিয়ে কথা বলেন। কথা বলেন অধিনায়ক হিসেবে দল নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা, এগিয়ে যাবার কথা। তারই কিছু অংশ ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো:

অধিনায়কত্ব নিয়ে বেশি চিন্তা করার কিছু নেই। আমি নরমাল থাকারই চেষ্টা করছি। অবশ্যই এটা গর্বের ব্যাপার। তবে রোমাঞ্চের কিছু নেই। এটা অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জ আমার জন্য, যেটা আমি উপভোগ করতে চাই।

আমার প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার যখন শুরু হয়, তখন রিয়াদ ভাই ছিলেন আমার অধিনায়ক। তখন থেকে তার কাছ অনেক কিছু শিখেছি। আমাদের যে পাঁচজন সিনিয়র ক্রিকেটার আছেন, মাশরাফি ভাই হয়তো এখন দলে নেই। তাদের সবার কাছ থেকেই শেখার অনেক কিছু আছে। একটা ব্যাপার কী, একেকজন একেক রকম। অবশ্যই তাদের কাছ থেকে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, আশা করি সম্মিলিতভাবে এর ফল দেখাতে পারবো।

সামনে জিম্বাবুয়ে সিরিজের যে চ্যালেঞ্জ আছে এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। দল হিসেবে এবং নিজের সেরাটা দেয়াই মূল লক্ষ্য। ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি যখন অধিনায়কত্ব করেছি, সবসময় একটা চিন্তাই থাকে- দল হিসেবে যেন খেলতে পারি। জিম্বাবুয়েতেও যেন দল হিসেবে খেলতে পারি এটাই লক্ষ্য। দলের পরিবেশও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সবাই তো পারফর্ম করবে না। দলের সদস্যরা যেন একজনের সাফল্য অন্যরা উপভোগ করি। এই সংস্কৃতি এবং দল হিসেবে খেলা গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যাটিংয়ে রানের চেয়ে দলের পারফরম্যান্সে ইমপ্যাক্ট বা ইতিবাচক প্রভাবকে বড় করে দেখছেন বাংলাদেশের নতুন টি-২০ অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। তার মতে, কখনও কখনও পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৫-২০ রানের ইনিংসও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

টি-২০তে আমরা যারা মিডল বা লোয়ার অর্ডারে ব‍্যাটিং করি, সেখানে রানের সংখ্যার চেয়ে ইমপ্যাক্টটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ১৫-২০ রান দেখতে অনেক ছোট লাগতে পারে। তবে এই রান খেলায় কতটা প্রভাব রাখতে পারছে সেটাই মূল বিষয়। আগে বুঝতে হবে ইমপ্যাক্ট। একদিন হয়তো ১৫-২০ রান করলাম, পরের ম‍্যাচে রান না করলে প্রশ্ন ওঠে, রান করে না। ১৫-২০ রানটা সংখ‍্যায় অনেক কম দেখা যায়। কিন্তু এখানে খেলায় কতটা প্রভাব ফেলতে পারছি কিংবা রাখতে পারছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

সবার সঙ্গেই কথা হয়েছে। রিয়াদ ভাই, সাকিব ভাই, তামিম ভাই, মুশফিক ভাই, মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে। সবার সঙ্গেই কথা হয়েছে। নরমাল যে কথাগুলো হয়, এগুলোই। বিশেষ কিছু না। নরমাল যেভাবে কথা হয়, ওরকমই। আর আমার কাছে মনে হয় যেটা, আমি চিন্তা করতেছি জিনিসটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার কিছু নেই।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে আমাদের সিনিয়র যারা আছেন, তাদের অবদান, তাদের কথা এক-দুইটা কথায় শেষ করতে পারবো না। এখন সব কিছু প্রক্রিয়ার ভেতরে আছে। আমাদের জন্য এটা একটা সুযোগ সামনে এগিয়ে নেওয়ার। তারা বাংলাদেশ দলকে একটা জায়গায় নিয়ে এসেছেন। আমরা যারা জুনিয়র আছি বা খেলছি তাদের দায়িত্ব পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাওয়া। এটা সবার জন্য সুযোগ। মূল বিষয় হচ্ছে আমাদের দলগতভাবে ভালো খেলতে হবে। সেটা করতে পারলে ভালো হবে। যে কোনো দলের মূল চালিকাশক্তি দলের ড্রেসিংরুম। সতীর্থদের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা ও দায়িত্ব বন্টন চালিকাশক্তির বড় উৎস।

পরামর্শ আসলে স্বাভাবিকভাবে যেভাবে কথা হয়, এইটাই। খুব বেশি ওরকম কিছু না। সবকিছুই সিম্পল জিনিটা তাদের কাছ থেকে, অনেক বছর একসঙ্গে খেলেছি। যেটা বললাম তাদের যে অভিজ্ঞতা আছে। সবার অধীনেই খেলা হয়েছে, সবকিছু মিলিয়ে আসলে জিনিসটা নিজে শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করব।

শেষ কয়েক বছরে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুম অনেকটাই উন্নতি করেছে। আমার কাছে মনে হয় এই জিনিসটা আমরা যেন আরও ভালোমতো করতে পারি। সিনিয়র ক্রিকেটারদের বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি যে অবদান এটা এক-দুইটা কথায় বলা যাবে না। পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাওয়ার আগে আমরা আরও ভালোভাবে কী করতে পারি, যে জিনিসগুলোর ঘাটতি আছে, সেগুলো কীভাবে পূরণ করতে পারি সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

এটা তো অবশ্যই গর্বের ব্যাপার। সামনে যে চ্যালেঞ্জ আছে সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি। খুব বেশি রোমাঞ্চ দেখানোর সুযোগ নেই। আমার কাছে মনে হয়, দল হিসেবে এবং নিজেদের সেরা দেওয়াটাই মূল লক্ষ্য।

ঘরোয়া ক্রিকেটে সোহান নিয়মিত অধিনায়ক। ঢাকা লিগ, জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে অধিনায়কত্ব করেছেন নিয়মিত। সাফল্য পেয়েছেন দুহাত ভরে। ঢাকা লিগে চ্যাম্পিয়ন, জাতীয় লিগেও হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। আগ্রাসী ক্রিকেটার হিসেবে আগ্রাসী অধিনায়ক হবেন এমনটাই প্রত্যাশা। তবে দলে স্বাস্থ্যকর সংস্কৃতি এনে ভালো ফল বের করে আনার দিকে মনোযোগ সোহানের।

আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে যখনই অধিনায়কত্ব করেছি, আমার সব সময় চাওয়া থাকে আমরা যেন দল হিসেবে খেলতে পারি। অবশ্যই লক্ষ্য থাকবে জিম্বাবুয়েতে যেন দল হিসেবে খেলতে পারি। মূল যে বিষয়টি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ… দলের পরিবেশ যেন ভালো থাকে। সবাই তো প্রতিদিন পারফর্ম করবে না। আমরা যারা দলের ক্রিকেটার থাকবো ১৪-১৫ জন, তারা যেন একজনের সাফল্য আরেকজন উপভোগ করি। এই সংস্কৃতি এবং দল হিসেবে খেলাটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা টেস্ট ও টি-২০তে ওয়ানডে থেকে পিছিয়ে আছি। আমার কাছে মনে হয় উন্নতি করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেটাই চেষ্টা করছি। এজন্য প্রক্রিয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। রেজাল্ট বা আউটকামের থেকে প্রক্রিয়া মেনে চলার চেষ্টা করবো। এই সিরিজে দলগতভাবে খেলা আমার কাছে বড় কাজ বলে মনে হচ্ছে।

আমি যদি আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলি, এই যে ক্রিকেট বা অন্য কিছু… আমার কাছে প্রত্যাশা খুব কম। কিংবা এক্সাইটমেন্ট, এগুলো আমার কাছে কম। আমার আছে মনে হয়, আমি নিজে আমার কঠোর পরিশ্রম করবো, প্রক্রিয়া অনুসরণ করবো, নিজে সৎ থাকবো। ফলাফল, ভবিষ্যৎ, অতীত এগুলো নিয়ে আমি খুব একটা চিন্তা করি না। যেটা বললেন, চাপ… সেগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। অনেক দিন ধরেই এটা করার চেষ্টা করছি। এগুলো আমার কাছে খুব একটা গ্রহণযোগ্য নয়।

অধিনায়কত্ব পেয়ে আকাশে উড়ছেন না উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। দলে তার জায়গা এখনও পাকাপাকি হয়নি অথচ অধিনায়কত্বের চাপ তার কাঁধে।

ঠিকঠাক মতো দল পরিচালনা, ফল নিয়ে আসা, পরিকল্পনা করা, সতীর্থদের সামলে নেয়া সবকিছুই এখন তার কাজের আওতাভুক্ত।

দায়িত্ব নিয়ে এখন তারুণ্য নির্ভর এ টি-২০ দলকে পরাজয়ের বৃত্ত থেকে কতটুকু টেনে তুলতে পারেন সোহান সেটা সময়ই বলে দেবে।