কেন এতো জনপ্রিয় দুবাইয়ের সোনা

দুবাই অনেকের কাছে সিটি অব গোল্ড নামে পরিচিত। তাদের উন্নতির পেছনে যতটা অবদান রয়েছে ট্যুরিজম এবং তেলের, ঠিক ততোটাই রয়েছে সোনার। প্রতি বছর দুবাইয়ে প্রায় ১২০০ টন সোনার বিজনেস হয়ে থাকে। পুরো পৃথিবীতে যতো সোনা বিক্রি হয়, তার ২৯ শতাংশ হচ্ছে দুবাইয়ে।
দুবাইয়ের সোনার মার্কেট এতোটাই বড় যে, শুধুমাত্র এ সেক্টরে চার হাজার ৮৬টি কোম্পানি কাজ করে। দুবাইয়ের সোনা বিশ্বব্যাপী এবং বেশ সমাদৃত। কারণ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় সেখানে দাম খুবই কম এবং সারা বছরই পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ থাকে।

দুবাইয়ের যে এতো সোনার ছড়াছড়ি তার বেশিরভাগই আমদানি করা হয় সাউথ আফ্রিকা থেকে। সাউথ আফ্রিকা ছাড়াও ৩০টিরও বেশি দেশের খনি থেকে উত্তোলন করা হয় কাঁচা সোনা এবং স্বল্পমূল্যে কিনে থাকে তারা। পরবর্তীতে এ কাঁচা সোনা প্রসেসিং করা হয় বিভিন্ন ইউনিক ডিজাইনের সব জুয়েলারি থেকে।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সোনার উপর ট্যাক্স দিতে হয়। ভারত বা বাংলাদেশেও সোনার উপর ভ্যাট, জিএসটি, এক্সাইজ ডিউটি এবং লেবর চার্জসহ সব মিলিয়ে বড় মাপের একটি ট্যাক্স দিতে হয়। এসব ভ্যাট, ট্যাক্সের কারণে সোনার প্রকৃত দামের থেকে সোনার দাম অনেকটাই বেড়ে যায়। তবে দুবাইয়ের সোনার উপর শুধুমাত্র পাঁচ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়।

তবে আগের ক্রেতাদের ট্যাক্সও গুনতে হতো না। ২০১৮ সাল থেকে এটিকে যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০১৮ সালের পূর্ব ফ্রী অব ভ্যাটে গোল্ড ক্রয় করা যেত। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে দুবাইয়ের প্রত্যেকটি দোকানে সোনার দাম একই হয়ে থাকে। এর কারণ সেখানে ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড প্রাইস অনুসরণ করা হয়। আর তাই সোনা কিনতে গিয়ে বিদেশি ক্রেতাদের কোনো ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয় না।সেখান থেকে কেনা সোনা এক্সচেঞ্জ করতে গেলে সম্পূর্ণ সোনাই এক্সচেঞ্জ করা যাবে। কোনো কাটছাঁট করা হবে না।

বিশ্বব্যাপী দুবাইয়ের সোনার মতো জনপ্রিয়তার আরেকটি কারণ হলো বিশুদ্ধতা। মার্কেটে যে সকল সোনা বিক্রি হয় সেগুলো সরকার কর্তৃক পরীক্ষিত করে বাজারে ছাড়া হয়। এছাড়া এসব সোনা উপর শুদ্ধতা যাচাইয়ের সিল থাকতে হয়। হলমার্ক দেখে বোঝা যায় সোনাগুলো কতটা শুদ্ধ এবং কতটুকু ক্যারেটের। কোনো দোকানে যদি হলমার্ক ছাড়া বা ভেজাল সোনা বিক্রি করা হয়, তবে তাকে দুই বছরের জেল দেয়া হয় অথবা নেয়া হয় দুই কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা। এই সকল শাস্তির ভয়ে সেখানে দুই নম্বর সোনা বিক্রি করা হয় না বললেই চলে।

যাদের কাছে ভ্যালিড পাসপোর্ট রয়েছে বা দুবাইয়ে এক বছর যাবত বসবাস করছে সেই ব্যক্তি কেবলমাত্র সোনা আনতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ রয়েছে। একজন পুরুষ বিনা ট্যাক্সে ২০ গ্রাম সোনা আনতে পারবেন। এরপর একজন নারী আনতে পারবে ৪০ গ্রাম সোনা। এর থেকে বেশি সোনা আনতে চাইলে কাস্টমসে বিল দিতে হবে যেটা পূর্বে ১০ শতাংশ ছিল। তবে বর্তমানে এর ভ্যাটের পরিমাণ ১২ দশমিক পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে।