একমুখী বিশ্বব্যবস্থার সমাপ্তি ঘোষণা করলেন পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের একমুখী আচরণই বিশ্বকে অস্থির করে তুলেছে। পশ্চিমা সেই ‘এককেন্দ্রিক বিশ্বের যুগ শেষ হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন পুতিন।

সিএনএন জানিয়েছে, সেন্ট পিটার্সবার্গে শুক্রবার ‘ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরাম’-এর বার্ষিক সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে পুতিন এ কথা বলেছেন।

ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, স্নায়ুযুদ্ধে জিতে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরকে পৃথিবীতে ঈশ্বরের নিজস্ব প্রতিনিধি বলে ঘোষণা করল।

শুধু নিজেদের স্বার্থরক্ষা ছাড়া যাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই। নিজেদের সেই স্বার্থকে তারা পবিত্র বলেও ঘোষণা করল। তাদের সেই একমুখী আচরণই বিশ্বকে অস্থির করে তুলেছে।

শুক্রবার অর্থনৈতিক ফোরামে ভ্লাদিমির পুতিনের বক্তব্য দেওয়ার আগে বড় ধরনের সাইবার হামলার শিকার হয় মস্কো। এ কারণে পূর্বনির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেড় ঘণ্টা পর বক্তব্য দেন পুতিন।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের সাইবার হামলার এবং পুতিনের বক্তব্যের সময় পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কারা এই সাইবার হামলা চালিয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে পুতিন কী বক্তব্য দেন, তার দিকে বিশ্ব তাকিয়ে ছিল। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিন আসলে কী ভাবছেন, তার মাথায় কী চলছে, এখানে তার বক্তব্যে সে সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু ধারণা পাওয়া যাবে বলে আশা বিশ্লেষকদের।

মঞ্চে উঠেই পুতিন দেরি না করে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের পশ্চিমা মিত্রদের তীব্র সমালোচনা শুরু করেন। পুতিন বলেন, পশ্চিমারা তাদের নিজস্ব বিভ্রমের ভেতর বাস করে। তারা মনে করে তারা জিতেছে। বাকি সব কিছু উপনিবেশ … সেখানে বাসকারীরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক।

রাশিয়ার অর্থনীতিকে আঘাত করার চেষ্টার জন্য পশ্চিমাদের দোষারোপ করেন পুতিন। মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞাকে ‘পাগলামি’ এবং ‘বেপরোয়া’ বলে অভিহিত করেন তিনি।

পশ্চিমাদের এই নিষেধাজ্ঞা এরই মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেন পুতিন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্যই বেশি ক্ষতিকর যারা তা আরোপ করে।

রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জেরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০০ বিলিয়ন ডলারের লোকসান হতে পারে বলে উল্লেখ করেন পুতিন। তার মতে, ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার রাজনৈতিক কর্তৃত্বও খুইয়েছে।

ভ্লাদিমির পুতিন আরো বলেন, ইইউ দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। নিষেধাজ্ঞার পরিণতিতে অসমতা কেবল আরো বেড়েই যাবে। এই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইউরোপের মানুষের বাস্তবিক স্বার্থের দিকটিকে একপাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা শক্ত মানুষ। যেকোনো চ্যালেঞ্জই আমরা মোকাবেলা করে চলতে পারি। রাশিয়া একটি শক্তিশালী এবং সার্বভৌম জাতি হিসেবে যাত্রা শুরুর সূচনালগ্নে প্রবেশ করছে। বর্তমান সময়ে ধরা দেওয়া ব্যাপক সুযোগ আমরা নিশ্চিতভাবেই কাজে লাগাব এবং আরো শক্তিশালী হব।

তিনি আরো বলেন, পশ্চিমা কম্পানিগুলোর সঙ্গে রাশিয়া কাজ করে যাবে।

সূত্র : সিএনএন।