ঢাকা থেকে জেদ্দা বিমানবন্দরে হজ ফ্লাইটে শত শত যাত্রী নামবেন। তখন যদি সেবা দেয়ার লোক খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে পরের দিনই পত্রিকায়, টিভিতে ছবি আর রিপোর্ট আসতে থাকবে বিমানে চরম অব্যবস্থাপনা নিয়ে। তবে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত লোক যাওয়ার জন্য প্রতি বছর যে ওয়ার্কিং ভিসা দিত এবার কিন্তু সেটি দেবে না বলে আগেই জানিয়েছে। ফলে জেদ্দা বিমানবন্দরে লোক নিয়োগ করতে চাইলেও আমরা দিতে পারছি না। সে জন্য এবার যাত্রীসেবায় আমাদের কিছুটা অনিশ্চয়তা ও অস্বচ্ছতা থেকেই যাচ্ছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে গণমাধ্যমের এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল এমন আশঙ্কার কথাই জানালেন।
অনুষ্ঠানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সেফটি, ফ্লাইট অপারেশন্স, বিএফসিসি, মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং যাত্রীসেবাসহ আট বিভাগের পরিচালকরা তাদের রুটিন কার্যক্রম উপস্থাপন করেন। এ সময় একজন পরিচালক আক্ষেপ করে বলেন, অনেকসময় জ্যামের কারণে যাত্রীরা ঠিক সময়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকতে পারেন না। এর দায়ও বিমান ম্যানেজমেন্টের ওপর চাপানো হয়।
গতকাল রোববার সকাল সোয়া ৯টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে (বোয়িং ৭৭৭) কাক্সিক্ষত প্রথম ফ্লাইট ৪১০ জন হজযাত্রী নিয়ে জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের পর জেদ্দার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে বলে জানা যায়।
বিমানের এমডি সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু হজ ফ্লাইট একটা বিশেষ কার্যক্রম; একসাথেই কিছু ফ্লাইট যাওয়া শুরু করে। সে জন্য প্রতি বছরের মতো এবারো পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কিছু লোক নিয়োগ করতে হয়েছে আমাদের। এই নিয়োগ হচ্ছে দেশে। আর বিদেশে নিয়োগের ক্ষেত্রে আপনাদেরকে আগেই অবহিত করে রাখছি, সৌদি আরব পর্বে আমাদের যেহেতু বিমানগুলো সারা বছর চলাচল করে। ফ্রিকোয়েন্সি কম। সেখানে যেহেতু জনবল কম, এর জন্য ওখানে অধিক লোককে সেবা দেয়ার জন্য চার্জ দিয়ে আমরা চালিয়ে আসছি; কিন্তু হজের সময় জেদ্দায় একসাথে এতগুলো ফ্লাইটের সম্মানিত হজযাত্রী নামবেন।
আর নেমে যদি তারা সেবার লোক খুঁজে না পান, পরেরদিনই কিন্তু অব্যবস্থাপনা নিয়ে রিপোর্ট ও ছবি আসতে থাকবে। এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় বলে রাখি, সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ এক্সট্রা লোক যাওয়ার জন্য যে ওয়ার্কিং ভিসা দিত, এবার সেটি দেবেন না বলে আমাদেরকে প্রায় মাসখানেক আগেই জানিয়েছেন। যার ফলে আমরা ওখানে লোক দিতে চাইলেও পারছি না। সে জন্য আমাদের ওই দিকটায় সেবা প্রদানের কিছুটা অনিশ্চিয়তা-অস্বচ্ছতা কিন্তু এখনো থেকেই যাচ্ছে। এই বিষয়টা আগে থেকে আমরা অবহিত থাকি। মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি। তবে আমরা সেবা দিতে কার্পণ্য করব না। ওখান থেকে বিকল্প হিসেবে আমরা লোক নিয়োগ করে সেবা দেয়ার ব্যবস্থাা নেবো। কিন্তু সেই লোক একটা পাস পাবে না।
যে পাসটা একটা নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত বিমানবন্দরে হজযাত্রীকে নিতে পারে। হয়তো তার বাইরে সে অবস্থান করবে। সেভাবে সে সেবা দেবে; কিন্তু যে লোকটা ভিসা নিয়ে, কার্ড নিয়ে, যেকোনো জায়গায় যেতে পারত, হজযাত্রীকে হেল্প করতে পারত, রিসিভ করতে পারত সেই সুযোগটা কিন্তু এবার নেই। সেটি এবার রাজকীয় সৌদি কর্তৃপক্ষের ওখান থেকেই বলা হয়েছে। তারপরও অনুরোধ জানিয়ে ভিসা নেয়ার চেষ্টা করছি। তার জন্য নামও পাঠিয়েছি। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সৌদিতে থাকা রাষ্ট্রদূত ও ব্যক্তিগত মাধ্যমে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যদি কোনো কারণে ভিসা দেয় তাহলে ওই জায়গায় আর গ্যাপ থাকবে না।
তিনি বলেন, প্রতিবারের মতো এবারো হজ ব্যবস্থাপনা দু’টি ধাপে সম্পন্ন হবে। একটি হচ্ছে বাংলাদেশের দিক থেকে হজযাত্রীদের নিয়ে যাওয়া এবং হজ সম্পন্ন করে সৌদি আরব থেকে আনা। যাওয়া এবং আসার ক্ষেত্রে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এবার মোট ৫৮ হাজার যাত্রী হজ করতে যাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে ২৯ হাজার যাত্রীকে বাংলাদেশ বিমান পরিবহন করবে। এই ২৯ হাজারের মধ্যে সরকারিভাবে হজ করতে যাওয়া চার হাজার ৫৬৫ জন হাজী রয়েছেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আবু সালেহ নয়া দিগন্তকে বলেন, এতদিন একমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সই আশকোনার হজ ক্যাম্প থেকে হাজীদের সবকিছু পরিচালনা করতেন। এবার সরকারের সিদ্ধান্ত আমাদের অংশীজন অর্থাৎ সাউদিয়া এয়ারলাইন্স এবং ফ্লাইনাসও তাদের সব কার্যক্রম আশকোনার হজ ক্যাম্প থেকে পরিচালনা করবে। সে জন্য গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং হিসেবে আমাদের ভূমিকা একটু বেশি পড়ে যায়।
তিনি বলেন, এবারের হজের নামকরণ করা হয়েছে ‘রোড টু মক্কা’। আশকোনা হজ ক্যাম্প থেকে যে ফ্লাইটগুলো যাবে সেগুলো সবই ‘রোড টু মক্কা’। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে যেগুলো যাবে সবগুলোই ডেডিকেটেট ফ্লাইট। কিন্তু ঢাকা থেকে মদিনাতে যে ফ্লাইট যাবে সেটিও কিন্তু ‘রোড টু মক্কা’ নামে যাবে। তিনি বলেন, এবার হজ প্যাকেজের জন্য সংশোধিত আকারে ভাড়া যোগ করা হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা; কিন্তু জেট ফুয়েলের দাম ইতোমধ্যে লিটার-প্রতি ছয় টাকা বেড়েছে। এখন কিন্তু আমরা বলতে পারছি না, আমাদের ভাড়াটা একটু বাড়াব। তারপরও হজ ফ্লাইট পরিচালনা করতে কোনো ধরনের ভর্তুকি দিতে হবে না বলে জানান এমডি।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে আগে বিমানের হজ ফ্লাইটে বিজনেস ক্লাসের সিট নিয়ে চরম অব্যবস্থাপনা ছিল। আমাদের বিমানেরই কিছু কিছু মানুষ এর সাথে জড়িত ছিল। অনেকে আবার তদবির করত। বিমানের বিজনেস ক্লাসের সিট থাকলেও হজ ফ্লাইটে সেবা দেয়া হয় ইকোনমি ক্লাসের। এবার ওই সিটের আসা এবং যাওয়ার জন্য একজন যাত্রীর ২৫০ ডলার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ওয়ানওয়ের জন্য দেড় শ’ ডলার। গতবার যাওয়া এবং আসার জন্য নেয়া হতো ২০০ ডলার। এতে সিট নিয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাাপনার পাশাপাশি বিমানেরও কিছু বাড়তি আয় হলো।