মধ্যপ্রাচ্যের গৃহযুদ্ধ কবলিত দেশ ইয়েমেনের রাজধানী সানার আকাশসীমায় উড়তে থাকা একটি ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা। মাটিতে নামার পর ড্রোনটি বিস্ফোরিত হয়েছে এবং এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও তিন জন।
রাজধানীর একটি জনবহুল এলাকায় ড্রোনটি ধসে পড়ার কারণেই হতাহতের এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা। কয়েক বছর আগে দেশটিতে হুথি বিদ্রোহীদের উত্থানের পর সানার নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে এই গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে। ইয়েমেনের মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থায়ও আসীন রয়েছেন হুথিদের সমর্থনকারী কর্মকর্তারা।
এক টুইটবার্তায় হুথিদের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহহিয়া সারি বলেন, ‘আমাাদের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি একটি চীনা সিএইচ ৪ ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এই ড্রোনটি সৌদি বিমানবাহিনীর এবং এর ভেতরে বিস্ফোরক ছিল।’
রাজধানীতে নজরদারি ও হামলার জন্য সশস্ত্র এ ড্রোনটি পাঠানো হয়েছিল বলে আমরা মনে করছি। এটা সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের করা শান্তিচুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘণ। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে হুথিদের প্রধান বৈরীপক্ষ সৌদি-আমিরাত সামরিক জোটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা, কিন্তু কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সানার আল রুইয়শান এলাকার একটি শপিং সেন্টারের সামনে বিধ্বস্ত হয়েছে সৌদি ড্রোনটি। মধ্যপ্রাচ্যের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে ধ্বংস হওয়া চালকবিহীন এই যুদ্ধ বিমানের ভিডিওচিত্র ভাইরাল হয়েছে।
২০১৫ সালের শুরুর দিকে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি আরবের নেতৃত্বে সৌদি-আমিরাত সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
কিন্তু অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসানের পরিবর্তে আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।
ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ছায়াযুদ্ধ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং একদা স্বচ্ছল এই দেশটি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খাদ্য ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের গুরুতর সংকটে ভুগছেন।
জাতিসংঘের উদ্যোগে চলতি বছর রমজান মাসে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্বাক্ষর করেছে হুথি ও সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের মধ্যে। সৌদি আরবে আশ্রয় নেওয়া মনসুর হাদিও গত ২৮ এপ্রিল ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিলের কাছে।