শ্রীলঙ্কায় গণবিক্ষোভ সামাল দিতে গত সোমবার কারফিউ জারি করা হলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে সরকারবিরোধীরা। বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। বিক্ষোভের তীব্রতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার ‘জনগণের সম্পত্তি ধ্বংসে লিপ্ত বিক্ষোভকারীদের’ দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রবল বিক্ষোভের মুখে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাহিন্দা রাজাপক্ষে। কিন্তু তাতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ একটুও প্রশমিত হয়নি। বরং বিক্ষোভকারীরা সদ্য পদত্যাগকারী মাহিন্দার বাসভবনে হামলা চালায়। তাঁর বাসভবন প্রাঙ্গণে কমপক্ষে ১০টি পেট্রল বোমা ছোড়া হয় বলে জানান এক শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা।
সরকারবিরোধী হাজার হাজার মানুষ গত সোমবার রাতভর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ঘিরে সহিংস বিক্ষোভ করে। মাহিন্দাকে উদ্ধারে শেষ পর্যন্ত সামরিক বাহিনীকে মাঠে নামতে হয়। ভোররাতের এক অভিযানে তাঁকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনীর একটি দল।
এদিকে মাহিন্দারই ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেরও পদত্যাগের দাবি করছে বিক্ষুব্ধরা। দাবির পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে বিক্ষোভস্থলে সরকারবিরোধীদের জমায়েত বাড়ছে বলে দাবি করেন বিক্ষোভকারীদের একজন চামাল পলওয়াতাগে।
২৫ বছর বয়সী তরুণ চামাল বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তাতে মানুষ ক্ষুব্ধ। গতকাল বিকেলে কারফিউ জারি করার পরও স্বেচ্ছাসেবকরা আমাদের খাবার ও পানি সরবরাহ করে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বিদায় না নেওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। ’
চরম অর্থনৈতিক সংকটের জেরে শ্রীলঙ্কায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পর্যন্ত দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। খাবার, ওষুধ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি সব কিছুর অভাবে নাকাল লঙ্কানরা কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজাপক্ষে পরিবারের শাসনের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ করছে।
গত সোমবার রাজাপক্ষেপন্থীরা সরকারবিরোধীদের ওপর সহিংস হামলা চালালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এদিনের সহিংসতায় একজন এমপিসহ কমপক্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। জারি করা হয় কারফিউ। প্রথমে শুধু রাজধানী কলম্বোয় কারফিউ জারি করা হলেও শিগগির তা দেশজুড়ে কার্যকর করা হয়।
কারফিউ সত্ত্বেও গতকাল বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পথে মোতায়েন সেনা সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছে, কাউকে ‘জনগণের সম্পত্তি ধ্বংস করতে দেখলে’ তাকে যেন সঙ্গে সঙ্গে গুলি করা হয়। সূত্র: এএফপি, বিবিসি