রুশ আগ্রাসনের মুখে পড়ে বিপর্যস্ত ইউক্রেন।রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন গত বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সামরিক অভিযান ঘোষণার কয়েক মিনিট পরেই ইউক্রেনে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে রুশ সেনারা। এরপর থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধ বন্ধে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চললেও এখনও কোনো ফল মেলেনি। ইতিমধ্যে ইউক্রেনে চলমান রুশ আগ্রাসনের সর্বত্মক হামালার মুখে জীবন বাঁচাতে ইউক্রেন ছেড়েছেন দেশটির লাখ লাখ নাগরিক। পাশ্ববর্তী দেশ ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন ইউক্রেনীয়রা। তবে সম্প্রতি এই চলমান যুদ্ধের নাঝেই মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে ইউক্রেনীয় তরুণী দারিয়া সাখনিউকে বিয়ে করলেন রুশ প্রেমিক ইমন ডোব্রোভস্কি।
ইউক্রেনীয় তরুণী দারিয়া সাখনিউক (২৭) ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি ডেন্টাল অফিসে প্রশাসক হিসেবে কাজ করতেন। তার প্রেমিক ২৯ বছরের রাশিয়ান যুবক সাইমন ডোব্রোভস্কি একজন অডিওলজিস্ট। দু’জনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়প্রার্থী। যুদ্ধের আগে দু’জনেই ইউক্রেনে বসবাস করছিলেন এবং চলতি এপ্রিলে কিয়েভে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। কিন্তু যুদ্ধের কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। অবশেষে দেশান্তরী হয়ে মেক্সিকোতে গিয়ে মার্কিন সীমান্ত লাগোয়া তিজুয়ানা শহরে গিয়ে বিয়ে সারলেন তারা। পরিণত পেল তাদের সাড়ে তিন বছরের প্রেম। বুধবার মেক্সিকান সিভিল রেজিস্ট্রি অফিসে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের পর দারিয়া সাখনিউক বলেন, “আমি খুব খুশি যে খুব সুন্দর কিছু লোকের সাথে দেখা হয়েছে যারা আমাদের দু’জনকে তিজুয়ানায় বিয়ে করতে সহায়তা করেছে।” বিয়ের অনুষ্ঠানের পরে ঐতিহ্যবাহী মেক্সিকান ‘তাকুইজা’ পার্টি এবং মারিয়াচি ব্যান্ডের সাথে সাখনিউকের ২৭তম জন্মদিন উদযাপন করে নবদম্পতি।
তিজুয়ানা সিটি কাউন্সিলের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দুই সপ্তাহ আগে এই জুটি মেক্সিকোতে আসে। ডোব্রোভস্কি অভিবাসন নীতির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিতে পারছিলেন না। কেননা, বর্তমানে এটি কেবলমাত্র যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা ইউক্রেনীয় নাগরিকদের জন্য প্রাপ্য। এখন যেহেতু তিনি একজন ইউক্রেনীয়কে বিয়ে করেছেন। সুতরাং এই দম্পতিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে এবং নিউইয়র্কে পুনরায় বসবাসের অনুমতি পাবে আশা করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য ২০০৮ সাল থেকে আবেদন করে ইউক্রেন। মূলত, এ নিয়েই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তবে সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় দ্বন্দ্বের তীব্রতা আরও বাড়ে। ন্যাটোর সদস্যপদের আবেদন প্রত্যাহারে চাপ প্রয়োগ করতে যুদ্ধ শুরুর দুই মাস আগ থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রাখে মস্কো। কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে না আসায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। ঠিক তার দুদিন পর ২৪ তারিখ ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।