বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীকে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও হত্যা-গুমের অপরাধ থেকে দায়মুক্তি দেওয়ার সংবাদ পেয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিপীড়ন ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি ভোগ করে আসছে বলে খবর রয়েছে। তাদের নিপীড়ন, হত্যা ও দুর্নীতির খুব কম সংখ্যক ঘটনাতেই তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র অনুযায়ী অধিকাংশ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ন্যস্ত উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। তবে ওই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও র্যাব ছাড়াও আছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)।
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব বিষয়ের গ্রহণযোগ্য খবর রয়েছে সেগুলো হলো, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বেআইনি হত্যাকাণ্ড; গুম; সরকারের পক্ষে নাগরিকদের নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ; কারাগারে জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী পরিবেশ; নিবর্তনমূলক গ্রেপ্তার বা আটক; রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার; অন্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তির ওপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ; বিচারবিভাগের স্বাধীনতার জন্য বাধা; ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর বেআইনি হস্তক্ষেপ; কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ উঠলে তাঁর পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দেওয়া; বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ, যার মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা ও হুমকি, অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার বা বিচারের মুখোমুখি করা; ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ; শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সমিতির স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ, যার মধ্যে রয়েছে সংগঠন, তহবিল বা বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজ সংগঠনের ওপর বিধিনিষেধমূলক আইন।
এ ছাড়া শরণার্থীদের চলাচলের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ; শরণার্থীদের নিপীড়ন; ব্যক্তির রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর গুরুতর ও অযৌক্তিক বিধিনিষেধ; সরকারি পর্যায়ে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি; দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে হয়রানি বা সেগুলোর ওপর বিধিনিষেধ; লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার তদন্ত ও জবাবদিহির ক্ষেত্রে ঘাটতি, যার মধ্যে গৃহনির্যাতন, যৌন নির্যাতন, শিশু নিপীড়ন, বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়েসহ অন্যান্য ক্ষতিকর চর্চা রয়েছে; ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর সহিংসতা ও হুমকি; হিজড়াসহ ভিন্ন লৈঙ্গিক আচরণের মানুষের ওপর সহিংসতা; ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিকদের সমিতি করার স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ এবং ব্যাপক মাত্রায় শিশু শ্রম।
দেশীয় মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, গত বছর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে কমপক্ষে ৮০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫১ জন ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে ‘ক্রসফায়ারে’ মারা গেছেন।
২০১৮ সালের মে থেকে জুনের মধ্যে আসক মোট ৬০৬টি বিচারবহির্ভূত মৃত্যুর ঘটনার রিপোর্ট করেছে।
অপর এক মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের মতে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ৭১টির মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের হিসাবে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গুলিতে ৩০ জন নিহত হয়েছেন এবং হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনের শিকার হয়ে আরও ৬ জন মারা গেছেন।
২০২০ সালে অধিকার মোট ২২৫টি বিচারবহির্ভূত মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৯১টি।
মানবাধিকার সংগঠন ও সুশীল সমাজ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দাবি করেছে, নিহতদের অনেকেই নির্দোষ।