পাকিস্তানের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে ওয়াশিংটনের ষড়যন্ত্র আছে বলে যে অভিযোগ করেছেন ইমরান খান, সেটি নাকচ করে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, এটি একেবারে সত্য নয়।
শনিবার গভীর রাতে পাকিস্তানের সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীর পদ হারিয়েছেন ইমরান খান। দেশটির ৩৪২ সদস্যের সংসদের ১৭৪ জনই ইমরান খানের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে পাক এই প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন যে, তার স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির কারণে কিছু ‘বিদেশি শক্তি’ বিরক্ত। তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে বিরোধীদের অর্থায়ন করেছে সেই শক্তিরা।
এর আগে, শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ইমরান খান পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন শাসক গোষ্ঠী পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ একজন কূটনীতিক হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। অপর এক বিবৃতিতে ইমরান খান মার্কিন ওই কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেন। তিনি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
চলতি বছরের ৭ মার্চ ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদকে তলব করে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ এই কর্মকর্তা ইউক্রেনের চলমান ঘটনায় পাকিস্তানি নেতৃত্বের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের নিন্দা জানান। একই সঙ্গে তিনি ক্ষমতা থেকে ইমরান খানকে সরিয়ে দেওয়া হলেই কেবল যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানের অংশীদারিত্ব সম্ভব বলে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জেলিনা পোর্টারকে একজন সাংবাদিক জাতির উদ্দেশ্যে ইমরান খান ভাষণ দেওয়ার সময় আবারও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটে উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বলে জানান। জবাবে জেলিনা পোর্টার বলেন, এটি প্রমাণ করার জন্য তার (ইমরান) কাছে কূটনৈতিক বার্তা আছে।
‘তবে আমি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলছি, এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই,’ বলেন পোর্টার। তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তানের এই ঘটনার অগ্রগতির দিকে নজর রাখছি। পাকিস্তানের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ও আইনের শাসনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা এবং সমর্থন রয়েছে। কিন্তু আমি আবারও বলছি, এসব অভিযোগ একেবারে সত্য নয়।
মার্কিন সাময়িকী ফরেইন পলিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমরান খান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করার পর ওয়াশিংটনের সাথে ইসলামাবাদের ভঙ্গুর সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আর এই সংকটকে তাদের রাজনীতির কেন্দ্রীয় অংশ বানানো হয়েছে।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক এই সংবাদমাধ্যম বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে জনসাধারণের অবিশ্বাস আরও গভীর হয়েছে। কারণ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মার্কিন হস্তক্ষেপের পুরোনো ইতিহাস রয়েছে। ইমরান খানের অভিযোগ ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান’ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে ফরেইন পলিসির প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে।