নিজের পরিবার সম্পর্কে কোনো প্রসঙ্গ এলে সব সময়ই মেপে কথা বলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ২০১৫ সালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মেয়ের পরিচয় সম্পর্কিত প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন পুতিন।
ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মেয়েরা রাশিয়ায় বাস করে এবং শুধু রাশিয়াতেই পড়াশোনা করে। তাদের জন্য আমি গর্বিত। তারা বিদেশি তিনটি ভাষা সাবলীলভাবে বলতে পারে। আমার পরিবার সম্পর্কে কারো সঙ্গে আলোচনা করতে চাই না। ‘
তিনি আরো বলেছিলেন, প্রত্যেক ব্যক্তির নিজেদের মতো করে চলার অধিকার আছে। তারা তাদের মতো করে জীবনযাপন করে এবং সেটি মর্যাদার সঙ্গেই করে।
ভ্লাদিমির পুতিন নিজের মেয়েদের নাম বলতে চান না। তবে সেটা অন্যরা তো আর মানছে না। পুতিনের দুই মেয়েসহ তার কাছের লোকজনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নাম প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের পরিবার এবং বড় ব্যাংকগুলোও রয়েছে।
ওই নিষেধাজ্ঞায় ৩৬ বছর বয়সী মারিয়া ভোরনসোভা এবং ৩৫ বছর বয়সী কেটেরিনা টিখোনভা রয়েছেন। মার্কিন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি যে- পুতিনের অনেক সম্পদ তার পরিবারের সদস্যদের কাছে লুক্কায়িত রয়েছে এবং সে কারণেই আমরা ওই সদস্যদের টার্গেট করেছি।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা দুই নারী পুতিন এবং তার সাবেক স্ত্রী লুদমিলার মেয়ে। লুদমিলাকে ১৯৮৩ সালে বিয়ে করেছিলেন পুতিন। তারপর ৩০ বছর তারা সংসার করেছেন।
২০১৩ সালে পুতিন বলেছিলেন, ‘এটা যৌথ সিদ্ধান্ত। আমাদের একে অপরের সঙ্গে খুব কমই দেখা হয়, আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব জীবন আছে। ‘ লুদমিলার অভিযোগ ছিল, পুতিন সম্পূর্ণভাবে কাজে নিমজ্জিত ছিলেন।
তাদের বড় মেয়ে মারিয়া ১৯৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করেছেন এবং মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে ওষুধের ওপর পড়াশোনা করেছেন। মারিয়া বিয়ে করেছেন ডাচ ব্যবসায়ী জরিত জোস্ট ফ্যাসেনকে। ইউক্রেনে রুশ হামলার ঘটনায় বাবাকে সমর্থন করেন তিনি।
ছোট মেয়ে কেটেরিনা তার বড় বোনের তুলনায় জনসাধারণের চোখের সামনে অনেক বেশি ছিলেন। নৃত্যশিল্পী হিসেবে প্রতিভার কারণে এমনটি হয়েছে। তিনি এবং তার সঙ্গী ২০১৩ সালে একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে পঞ্চম স্থানে ছিলেন।
ওই বছরই তিনি কাইরিল শামালভকে বিয়ে করেন। ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘদিনের বন্ধুর ছেলে কাইরিল। তাদের বিয়ে সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছেই দারুণ এক স্কি রিসোর্টে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
রাশিয়ার জ্বালানি খাতে ভূমিকার জন্য ২০১৮ সালে শামালভকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বিয়ের পর শামালভের ভাগ্যের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনের বুচা শহরে রুশ সেনাদের সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার রাশিয়ার ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি এর আগে বলেছিলেন, ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ায় নতুন বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করবে।
এ ছাড়া রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ক্রেমলিনের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকাও খবর দিয়েছিল, ওয়াশিংটন ভ্লাদিমির পুতিনের দুই মেয়ে এবং রাশিয়ার বৃহত্তম ব্যাংক স্বারব্যাংকের বিরুদ্ধে আরো নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করছে। শেষ পর্যন্ত তা-ই করা হলো।
ইইউ রাষ্ট্রদূতদের বুধবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে পঞ্চম দফা নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা যাচাই করার কথা ছিল। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার কয়লা আমদানি নিষিদ্ধ করা এবং রুশ মালিকানাধীন বা তাদের পরিচালিত জাহাজের বেশির ভাগের জন্য ইইউ-এর বন্দর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
সূত্র : বিবিসি।