দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার জেরে রাষ্ট্র হিসেবে দেউলিয়া হয়ে গেছে পশ্চিম এশিয়ার দেশ লেবানন। সোমবার লেবাননের টেলিভিশন সংবাদমাধ্যম আল জাদিদ চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী সাদেহ আল শামি।
সাক্ষাৎকারে আল শামি বলেন, ‘ব্যাংক ডু লিবানের (লেবাননের কেন্দ্রীয় ব্যাংক) মতো আমাদের দেশও দেউলিয়া হয়ে গেছে। বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে চলছি আমরা এবং চেষ্টা করে যাচ্ছি—জনগণের ভোগান্তি যেন কিছুটা হলেও কমাতে পারি।’
লেবাননের অর্থনীতির পতন শুরু হয় ২০১৯ সালের অক্টোবরে, দেশটির দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের অবসানের পর থেকে। গৃহযুদ্ধে বিবদমান পক্ষগুলোর নেতারা দেশটির রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন এবং নিজেদের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নামেন।
নতুন এই রাজনৈতিক নেতাদের তৎপরতায় প্রাথমিক পর্যায়ে উল্লম্ফন ঘটলেও পরবর্তীতে সীমাহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ফলে ধস নামে লেবাননের অর্থনীতির।
ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ অবমূল্যায়ন ঘটেছে লেবাননের মুদ্রা লেবানিজ পাউন্ডের। ফলে খাদ্য, পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো অতি প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা দিন দিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে দেশটির সাধারণ মানুষের। প্রয়োজনীয় জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চলে।
বিশ্বের ক্ষুদ্রায়তনের দেশসমূহের মধ্যে লেবানন অন্যতম, আয়তন মাত্র ১০ হাজার ৪৫২ বর্গকিলোমিটার। জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই আমদানি করতে হয় দেশটিকে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার জেরে বর্তমানে লেবাননের ৮২ শতাংশেরও বেশি মানুষ দরিদ্রের জীবনযাপন করছেন, বেকার অবস্থায় আছেন ৪০ শতাংশ।
২০১৯ সালে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়েছিল, করোনা মহামারি ও ২০২০ সালে বৈরুত বন্দরে ব্যাপক বিস্ফোরণে তা আরও ঘনীভূত হয়। ওই বিস্ফোরণে ২১৬ জন নিহত হয়েছিলেন, আহত হয়েছিলেন কয়েক হাজার এবং রাজধানীর একাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।
তবে লেবাননের এই দুরবস্থার জন্য দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়ও কম নয়। জাতীয় ক্ষমতায় জেঁকে বসা রাজনীতিবিদরা গৃহযুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে অর্থনীতির পুনর্গঠনের জন্য বলতে গেলে প্রায় কোনো উদ্যোগই নেননি। ফলে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক দাতা ও ঋণদানকারী সংস্থাগুলোও দিন দিন দেশটিকে আর্থিক সহায়তা ও ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।