প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন পাকিস্তানের সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার কাসিম শাহ সুরি। বিরোধীদের এই অনাস্থা প্রস্তাব সংবিধানের পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে রোববার সেটি খারিজ করে দেন তিনি।
পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরুর পর পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি দেশটির সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যহীনতার অভিযোগ তোলেন।
এর আগে, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে বলে যে অভিযোগ তুলেছিলেন, তার পুনরাবৃত্তি করেন ফাওয়াদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্রের পেছনে বিদেশি রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে তিনি এই অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়ে ডেপুটি স্পিকারকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান।
তার বক্তৃতার পরপর পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি বলেন, অনাস্থা প্রস্তাব গত ৮ মার্চ উপস্থাপন করা হয়েছিল এবং এটি আইন ও সংবিধান অনুযায়ী হওয়া উচিত। তিনি বলেন, কোনো বিদেশি শক্তিকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাচ্যুত করতে দেওয়া হবে না।
তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী যে যুক্তি তুলে ধরেছেন, সেটি বৈধ বলেও মন্তব্য করেন সুরি। এরপর অনাস্থা ভোট খারিজ করে দিয়ে সংসদের অধিবেশন মূলতবি ঘোষণা করেন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ায় এখন আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
দেশটির আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
সংবিধান বিশেষজ্ঞ আব্দুল মইজ জাফারি বলেন, মিথ্যাকে বড়, সহজ করুন এবং বারবার বলতে থাকুন। তারপর আপনি সংবিধান ছিঁড়ে ফেলতে পারবেন। ডেপুটি স্পিকার আজ যা করেছেন তা কেবল সাংবিধানিক অনুচ্ছেদের অযৌক্তিক অপপ্রয়োগ নয়। এটি একইভাবে পিটিআইয়ের সদস্যদের সংবিধানের অপপ্রয়োগ এবং প্রকাশ্যে ভুল ব্যাখ্যা ও সংবিধানকে ভুলভাবে উপস্থাপনের বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টার চূড়ান্ত পরিণতি।
ইসলামাবাদ-ভিত্তিক বিশ্লেষক তারিক আজিম খান বলেছেন, অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া একেবারে ‘অসাংবিধানিক’ এবং ‘অবৈধ’।
তিনি বলেন, ‘এটা পুরোপুরি অসাংবিধানিক। এটা করা উচিত হয়নি। কারণ এটা আগেই মেনে নেওয়া হয়েছিল যে, আজ ভোট হতে যাচ্ছে। ভোট অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত ছিল। তারা খারিজ করে দিয়েছেন। এটা পুরোপুরি অবৈধ।’
পাকিস্তানি এই বিশ্লেষক বলেন, আমি আনন্দিত যে, সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়টি নজরে নিয়েছে। আমি ধারণা করছি, এটি নিয়ে আদালতে পূর্ণাঙ্গ শুনানি হবে এবং খুব শিগগিরই আদালতে শুনানি হওয়া উচিত।
আইনজীবী সালমান আকরাম রাজা বলেন, এখন সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া ছাড়া বিরোধীদের কোনো উপায় নেই। আমার মতে, সাংবিধানিক একটি পদক্ষেপের ব্যাপারে স্পিকার অসাংবিধানিক আদেশ দিয়েছেন।
অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি সংবিধানের লঙ্ঘন। তবে আদালত এই বিষয়টি নজরে নেবেন কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সংবিধানের ৬৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বলছে, জাতীয় পরিষদ অথবা সিনেটের কোনো কাজে শীর্ষ আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।