পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, গত ৭৪ বছরে দেশটির কোনো প্রধানমন্ত্রীই তাদের ক্ষমতার মেয়াদ কখনো পূর্ণ করে যেতে পারেননি। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে রাজনৈতিক কিংবা সামরিক অস্থিরতার মুখে বিদায় নিতে হয়েছে তাদের। হয় তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে নয়তো ইস্তফা দিয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসা তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান।
পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে বিরোধীরা। একের পর এক ইমরান খানের সঙ্গ ছাড়াছেন তাঁর জোট সঙ্গীরা। পাক রাজনীতিতে যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে তাতে ইমরান খানও কি ওইসব প্রধানমন্ত্রীদের তালিকায় সামিল হতে চলেছেন। এমনটাই আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ইমরানের পিটিআই সরকারকে উৎখাত করতে বিরোধীরা যেভাবে জোটবদ্ধ হচ্ছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, এমকিউএম বিরোধী দলের সঙ্গে চুক্তি করায় দেশটির জাতীয় পরিষদে পিডিএমের সদস্য সংখ্যা এখন ১৯৯ জনে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ইমরান সরকারের সদস্য সংখ্যা কমে ১৪২-এ দাঁড়িয়েছে। জোটসঙ্গীদের নিয়ে ক্ষমতায় আসার সময় পিটিআইয়ের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৭৯ জন।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে জিততে কমপক্ষে ১৭২ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। অবশ্য ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এখন পিটিআইয়ের কোনো সদস্যের সমর্থনের প্রয়োজন নেই পিপিপি নেতৃত্বাধীন বিরোধীদের। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইমরান তার মেয়াদ শেষ করতে পারবেন, নাকি তার আগেই বিদায় নিতে হবে- সেটা ৩ এপ্রিলের পরই হয়তো জানা যাবে।
ইমরান খানের আগে বেনজির ভুট্টো, নওয়াজ শরিফ, সওকত আজিজরা গদি হারিয়েছেন। পাকিস্তানে এখনও পর্যন্ত ১৮ প্রধানমন্ত্রী গদিতে বসেছেন। এদের মধ্য়ে ছিলেন কেয়ারটেকার প্রধানমন্ত্রীও। কিন্তু কেউ ৫ বছর টেকেননি। কাউকে সরতে হয়েছে সেনার চাপে, কেউ সরেছেন আদালতের নির্দেশে। কাউকে সরতে হয়েছে আস্থা ভোটে হেরে। ইমরান খান হারলে তিনি বেনজির ভুট্টো, সওকত আজিজের দলে অন্তর্ভূক্ত হবেন। দেখে নিন সেইসব পাক প্রধানমন্ত্রীর তালিকা যারা মেয়াদ শেষ করতে পারেননি-
লিয়াকত আলি খান-খুন হন (১৯৪৭ এর ১৫ অগাস্ট-১৬ অক্টোবর ১৯৫১)। খাজা নাজিমুদ্দিন-সরকার পড়ে যায়। চৌধুরি মুহাম্মদ আলি-ইস্তফা দেন। হুসেন সাহিদ সুরাওয়ার্দি-ইস্তফা দেন। ইব্রাহিম ইসমাইল-ইস্তফা দেন। ফিরোজ খান নুন-সরকার পড়ে যায়। দেশে জারি হয়ে সেনা শাসন। আয়ুব খান। নুরুল আমিন-ইস্তফা দেন। জুলফিকার আলি ভুট্টো-সেনা অভ্যুত্থানে অপসারিত। মুহাম্মদ খান জুনেজু-অপসারন করেন রাষ্ট্রপতি জিয়া উল হক।