বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কাউন্সিলের শীর্ষ সম্মেলনে গভীর রাতে ভাষণ দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানে তিনি চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার ধ্বংসযজ্ঞ এবং ইউক্রেনের ক্ষয়ক্ষতির রূপরেখা দেন। একইসঙ্গে ইউক্রেনের সমর্থনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য ইউরোপকে ধন্যবাদও জানান তিনি।
এরপরই চরিত্রগত স্পষ্ট ভাষায় ইউরোপীয় নেতাদের সমালোচনাও করেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। রাশিয়াকে থামাতে ইউরোপ অনেক দেরি করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শুক্রবার (২৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘আপনারা (রাশিয়ার বিরুদ্ধে) নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছেন। এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এগুলো শক্তিশালী পদক্ষেপ। কিন্তু একটু দেরি হয়ে গেছে… (আরও কিছু করার) সুযোগ ছিল।’
তিনি আরও বলেন, যদি প্রতিরোধমূলক নিষেধাজ্ঞা থাকতো তাহলে হয়তো রাশিয়া যুদ্ধে নামতে পারতো না। তিনি নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাস পাইপলাইনের বিষয়ে বলেন, এটি যদি আগেই অবরুদ্ধ করা হতো, তাহলে ‘রাশিয়া গ্যাস সংকট তৈরি করতে পারতো না’।
এরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ইউক্রেনের যোগদানের আবেদন অনুমোদন করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে অনুরোধ করেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘এখানে আমি আপনাদের অনুরোধ করছি – (ইউক্রেনের সদস্যপদ অনুমোদনে) দেরি করবেন না।’
এর আগে বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে সুইডেনের আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনে চলমান রুশ অভিযান যদি আমরা ঠেকাতে না পারি, তার অর্থ হলো … রাশিয়ার সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রই এখন ঝুঁকিতে আছে।’
সেখানে তিনি আরও বলেন, ‘এখন ইউক্রেনে অভিযান চলাচ্ছে রাশিয়া, খুব দ্রুত ইউরোপেও অভিযান শুরু করবে দেশটি; এবং সেই অভিযানের লক্ষ্য হবে ইউরোপের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া।’
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বহু শহর কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ৩০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয়।