একটি উন্নত জীবন। পরিবারের এক চিলতে সুখ আর মুখ ভরা হাসি ফোটাতে নিজের সুখকে জলাঞ্জলি দিয়ে সুখ কিনতে বিদেশে পাড়ি জমান প্রবাসীরা। কেউ সুখী হয় কেউ আবার দুঃখে ভরা জীবন পাড় করেন।
এদিকে, জর্ডান ফেরত এক মানসিক ভারসাম্যহীন ও পঙ্গু নারী হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) দুপুর ১টায়। সঙ্গে কাগজপত্র না থাকায় এবং তিনি কথা বলতে না পারায় কিছুটা বেকায়দায় পড়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে সাথী আক্তার নামে ওই নারীর চোখে মুখে ছিল অসহায়ত্বের চাপ।
একপর্যায়ে জাজিরা এয়ারওয়েজের এয়ারপোর্ট ম্যানেজার ওই নারীর পরিবারকে খুঁজে পেতে ব্র্যাকের সহায়তা চান। এরপর তাকে নিরাপদ অভিবাসনের জন্য বিমানবন্দর থেকে ব্র্যাক লার্নিং সেন্টার আশকোনাতে নেওয়া হয়। পরে মাত্র ৮ ঘণ্টার চেষ্টায় ওই নারীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয় ব্র্যাকের ফিল্ড অফিস কর্তৃপক্ষ।
ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন ব্র্যাকের কর্মকর্তারা। তাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয় পরিবার। ওই সময় ব্র্যাকের কার্যালয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকজন।
সাথী আক্তার (৩৬) টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালত পাড়া এলাকার বিপ্লব নামের এক ব্যক্তির সাবেক স্ত্রী। তার বাবার বাড়ি জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের দোলভিটি গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের ছবের আলীর মেয়ে। তারা বর্তমানে আশুলিয়ার বাইপাইলে ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ইনফরমেশন সার্ভিস সেন্টারের ম্যানেজার আল আমিন নয়ন বলেন, ‘বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে সাথী দেশে ফেরেন। জর্ডান থেকে যখন বিমান ফ্লাই করে তখনও ওই নারী মোটামুটি স্বাভাবিক ছিলেন। কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তিনি ঠিকানা বলতে পারেন না।
বাংলাদেশে আসার পরে তার সঙ্গে কোনও কাগজপত্র ছিল না। একপর্যায়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ব্র্যাকের সহযোগিতা চান। আমরা সেখানে যাই। জর্ডান থেকে যখন বর্ডিং হয় তখন ওই জারিরা এয়ারওয়েজে তার ডকুমেন্ট নিয়ে আসেন। সেখানে টাঙ্গাইলের ঠিকানা দেখে আমরা জেলা অফিসে যোগাযোগ করি।
এরপর তাদের মাধ্যমে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। টাঙ্গাইলে তার পরিবারকে পাওয়া যায়নি। এক;পর্যায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে পরিবারকে খুঁজে পাওয়া যায়। তার পরিবার থাকে আশুলিয়ার বাইপাইলে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পরিবারের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডেপুটেশন ক্যাম্প থেকে তাকে দেশে পাঠানো হয়েছে। তার শরীরে নি;র্যাত;নের চিহ্ন; রয়েছে। ব্র্যাক এ ধরনের মানুষকে নিয়ে কাজ করে সবসময়। পরবর্তী সময়ে ওই নারীর পরিবারকে বলা হয়েছে, আমরা তার চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করবো।’
জানা যায়, ছবের আলীর মেয়ে সাথী আক্তারের সঙ্গে টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালতপাড়ার বাসিন্দা বিপ্লব নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রায় ২২-২৩ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এরপর তাদের ঘরে দুই মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান হওয়ার কয়েক বছর পর বিপ্লব সাথীকে রেখে অন্য নারীকে বিয়ে করেন।
দুই মেয়েকে নিয়ে বেকায়দায় পড়েন সাথী আক্তার। পরে তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যান। সেখানে একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবার সংসার চালাতে কষ্ট হওয়ায় ১০ বছর আগে জর্ডানে পাড়ি জমান। বাবা ছবের আলী জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীর দোলভিটি গ্রাম থেকে গিয়ে মেজো মেয়ের ভাড়া বাসা বাইপাইলে দুই নাতনিকে নিয়ে আশ্রয় নেন।
জর্ডান থেকে তার পাঠানো টাকা দিয়ে কোনও রকমভাবে সংসার চলছিল। এর মধ্যে সাথীর বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আর ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। মানসিক ভারসাম্যহীন ও পঙ্গু হওয়ায় সাথীর পরিবার ভেঙে পড়েছেন। তার চিকিৎসা ও সংসার চালানোর খরচ নিয়ে তারা পড়েছেন চরম বিপাকে।
সাথী আক্তারের বাবা ছবের আলী বলেন, ‘সাথী প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে জর্ডানে যায়। এর আগেও জর্ডানে গিয়ে আরও চার বছর ছিল। যে মালিকের কাছে সাথী গিয়েছিল সম্প্রতি সেই মালিক পরিবর্তন করে অন্য মালিকের কাজ করছিল। প্রায় দুই মাস আগে হঠাৎ করে সাথী অসুস্থ হয়ে পড়ে।
পরে পুলিশ গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে। আমার মেয়ে এখন হাঁটতেও পারে না, কথাও বলতে পারে না। ব্র্যাকের সহায়তায় আমার মেয়েকে ফিরে পেয়েছি। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’