যে কারণে বরিস জনসনের সৌদি সফর নিয়ে বিতর্ক

তেল সরবরাহের নিশ্চয়তার জন্য যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের সমালোচনা হচ্ছে। বরিস জনসন তার সৌদি আরব সফরের পক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরতা শেষ করতে ‘বিস্তৃত জোট’ প্রয়োজন।

সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা এখন দেশটির মানবাধিকার রেকর্ডের জন্য কোন কোন মহলে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। এ বিতর্কের কারণগুলো বিবিসি এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে।

সৌদি আরব এখন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইইউ ঘোষণা করেছে তারা ইউক্রেনে আক্রমণের কারণে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কম কিনবে। এজন্য বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে।

সৌদি আরব তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের জোট ওপেকের বৃহত্তম সদস্য। সরবরাহ বাড়িয়ে দাম কমাতে সাহায্য করার ক্ষমতা রয়েছে দেশটির।

এ কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর জন্যে সৌদি আরবের সদিচ্ছা প্রয়োজন। দেশটির শাসক পরিবারের সঙ্গেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা দরকার তাদের।

মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা

সৌদি আরব বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশগুলোর অন্যতম। চলতি মাসে এটি একদিনে ৮১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। এ সংখ্যা গত বছরের পুরো সময়ের চেয়ে বেশি। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদ, অপহরণ ও ধর্ষণসহ একাধিক জঘন্য অপরাধে’ তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।

অধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, সৌদি আরবে অনেকেই ন্যায্য বিচার পায় না। সরকার এই অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করে।

ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিকের হত্যাকাণ্ড

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক অবস্থান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। খাশোগি সৌদি সরকারের বড় সমালোচক ছিলেন।

জাতিসংঘ-নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, সৌদি গোয়েন্দারা রাষ্ট্রীয় সমর্থনে দেশটির ইস্তাম্বুল কনস্যুলেটে খাশোগিকে হত্যা করেছে। সৌদি আরবের প্রকৃত শাসক হিসেবে পরিচিত যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও অন্যান্য কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তার দিকে এজন্য অভিযোগের আঙুল ওঠে। তবে যুবরাজ তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার কথা জোরের সঙ্গে অস্বীকার করেছেন।

নারী অধিকার কর্মীদের কারাদণ্ড

২০১৮ সালে সৌদি কর্তৃপক্ষ ১৩ জন নারী অধিকারকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। তারা নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য একটি প্রচারণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অন্তত চারজন নারীকে জিজ্ঞাসাবাদকারীরা নির্যাতন করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০২০ সালে একটি সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক ট্রাইব্যুনাল সবচেয়ে পরিচিত আন্দোলনকর্মী লুজাইন আল-হাথলুলকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে।

এছাড়া বুদ্ধিজীবী, আলেম ও সংস্কারবাদীদের ওপর দমন-পীড়ন, দরিদ্র প্রতিবেশি ইয়েমেনের বিধ্বংসী যুদ্ধ ইত্যাদি কারণে সৌদি কর্তৃপক্ষ সমালোচিত হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি