যু’দ্ধে জিতলেও পুতিনকে দীর্ঘমেয়াদে চড়া মূল্য দিতে হবে: বাইডেন

ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে রাশিয়া শেষপর্যন্ত জয়ী হলেও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দীর্ঘমেয়াদে চড়া মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মঙ্গবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক ভাষণে বাইডেন বলেন, ‘যু’দ্ধক্ষেত্রে হয়তো তিনি জয়ী হবেন, যে উদ্দেশে এই অভিযানের নির্দেশ তিনি দিয়েছেন, তা হয়তো সফল হবে— কিন্তু এজন্য দীর্ঘমেয়াদে চড়া মূল্য দিতে হবে তাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুতিন ট্যাঙ্ক নিয়ে কিয়েভকে ঘিরে ফেলতে পারেন, কিন্তু তিনি কখনই ইউক্রেনের জনগণের হৃদয় ও আত্মা অর্জন করতে পারবেন না।’

এদিকে অভিযানের সপ্তম দিনে এসে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের অভিমুখে থাকা রুশ সেনাবাহিনীর দীর্ঘ গাড়িবহরটি অনেকখানি কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বহরটি এখন কিয়েভ থেকে মাত্র প্রায় ১৫ মাইল উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে।

দুয়েকদিনের মধ্যেই শহরের সামরিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হা’মলা শুরু হবে বলে জানিয়েছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাই নাগরিকদের নিরাপদে সরে যেতে আহ্বান জানানো হয়েছে। কিয়েভে অভিযান শুরুর আগে ইতোমধ্যে ইউক্রেনের কয়েকটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ারও দাবি করেছে রাশিয়া।

রাশিয়ার কাছে ক্রিমিয়ার দখল হারানোর পর পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে ন্যাটো। এই আবেদনকে ঘিরে দ্বন্দ্ব দানা বাঁধতে থাকে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করার পর মস্কো ও কিয়েভের মধ্যকার তিক্ততা আরও তীব্র হয়।

এর মধ্যেই ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য না করা, ডনবাস অঞ্চলে রুশপন্থিদের ওপর হা’মলা বন্ধের যে দাবি জানিয়ে আসছিল রাশিয়া তা মানতে অস্বীকৃতি জানায় ইউক্রেন সরকার, আমেরিকা ও ইউরোপ। এরপরই ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে। রাশিয়া বলছে, ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করতে এ অভিযান।

পুতিন এক ভাষণে ইউক্রেনে হা’মলার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, পশ্চিমারা রাশিয়ার সীমানায় ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে এসেছে। অথচ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের সময় তারা কথা দিয়েছিল ন্যাটোকে রাশিয়ার সীমানার কাছে আনা হবে না। কিন্তু গত তিন দশক ধরে রাশিয়ার সঙ্গে প্রতারণা করেছে ন্যাটো। একের পর এক দেশকে ন্যাটোতে নেওয়া হয়। রাশিয়া যদি ইউরোপ বা আমেরিকার সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র বসাতে যেত তাহলে তারা কী প্রতিক্রিয়া দেখাত, প্রশ্ন রাখেন পুতিন।

ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর বিভিন্ন শহরে রুশ বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যু’দ্ধ হচ্ছে ইউক্রেনের বাহিনীর। তবে গত দুই দিন ধরে সংঘাত তীব্র হয়ে উঠেছে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে। রুশ বাহিনীর রকেট হা’মলায় ইউক্রেনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটিতে ইতোমধ্যে শতাধিক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

এদিকে ইউক্রেনে হা’মলার জেরে রাশিয়ার বাণিজ্য ও ব্যাংক খাতে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা। তবে রাশিয়া বলেছে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়াকে থামানো যাবে না। লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।