সৌদি আরবের চাপে ইরানের সঙ্গে কঠোর হচ্ছে পাকিস্তান

কয়েক দিন আগেই পাকিস্তান সফর করেন সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন সৌদ বিন নাইফ। তার সফরের পরেই ইসলামাবাদ তার সর্বোচ্চ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে ইরানে পাঠায়। সেসময় পাকিস্তানের তরফ থেকে ইরানকে বলা হয় যাতে তারা এই অঞ্চলে সক্রিয় প্রক্সি সংগঠনগুলোকে সমর্থন দেয়া বন্ধ করে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূলত সৌদি আরবের চাপেই ইরানের সঙ্গে এই সুর প্রয়োগ করেছে পাকিস্তান।

এর পরপরই গত সপ্তাহে পাকিস্তান সফর করেন ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমদ ভাহিদি। এই সফরে তিনি পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, সেনাপ্রধান কামার বাজওয়া এবং পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে পাকিস্তান স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, ইরান যদি এ অঞ্চলের বিদ্রোহীদের সহায়তা করা বন্ধ না করে তাহলে পাকিস্তান পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু শুধু কী সৌদি আরবের চাপেই ইরানের সঙ্গে কঠোর হয়েছে পাকিস্তান!

মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, গত ২রা ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের দুটি সেনা ঘাটিতে হা’মলা চালায় বেলুচ বিদ্রোহীরা। এতে বেশ কয়েকজন পাক সেনা নিহত হন। প্রায় দুই দিন ধরে যুদ্ধের পর বিদ্রোহীদের হাত থেকে ঘাটি উদ্ধারে সক্ষম হয় পাকিস্তান। পাকিস্তান বিশ্বাস করে, এই বেলুচ বিদ্রোহীরা ইরানের মধ্যে ঘাটি স্থাপন করেছে এবং সেখান থেকেই তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হা’মলা চালাচ্ছে। এ নিয়ে ইরানের উপরে নাখোশ পাকিস্তান। দেশটির এই মনোভাবকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দী সৌদি আরব।

ইরানপন্থী বাহিনীগুলো মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের জন্যেও বড় হুমকি। তাই ইসলামাবাদ সফরে সৌদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসল দাবি ছিল, পাকিস্তান যাতে ইরানকে এ নিয়ে চাপ দেয়। ইরান তার স্বার্থের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে থাকা ইরানপন্থী বাহিনীগুলোকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। পাকিস্তানে থাকা শিয়া মুসলিমদেরও ইরান এসব বাহিনীতে নিয়োগ দিচ্ছে। এরইমধ্যে তেহরান ইয়েমেনের হুতির জন্য ইরাক থেকে শিয়া যুবকদের নিয়োগ দেয়ার কথা ভাবছে। তবে এ বিষয়ে ইরানকে সাবধান করেছে পাকিস্তান।

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানকে সম্মিলিত বাহিনী তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল সৌদি আরব। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। দেশটি প্রথম থেকেই কোনো নির্দিষ্ট জোটের দিকে হেলে না পড়ে ভারসাম্য বজায়ের চেষ্টা করে গেছে। তবে মিডল ইস্ট আই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, স্পষ্টভাবেই পাকিস্তান আর নিরপেক্ষ থাকতে পারছে না।

এর অন্যতম প্রধান কারণ ইরানভিত্তিক বেলুচ বিদ্রোহীদের পাক নিরাপত্তা বাহিনীর উপরে হা’মলা। ক্রমশ এ ধরণের হা’মলার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া সৌদি আরবের হাত ধরে নিজেদের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলারও চেষ্টা করছে পাকিস্তান।