‘বিশেষ’ নির্দেশনা মেনে বিদ্রোহীদের দলে ফেরাচ্ছে বিএনপি

দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে বহিষ্কার হওয়া নেতাদের দলে ফেরাচ্ছে বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘বিশেষ’ নির্দেশনা মেনে শর্তসাপেক্ষে তাদের দলে ফেরানো হচ্ছে।

দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানান, ঢালাওভাবে সবার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রথমত, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে। এর পর সার্বিক দিক বিবেচনা করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে, জেলাসহ স্থানীয় নেতাদের সুপারিশ ও বিগত দিনে দলীয় কর্মকাণ্ড এবং হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারসহ নানা দিক দেখা হচ্ছে। যে ঘটনায় বহিষ্কার হয়েছিল, সেই ঘটনায় অনুতপ্ত কিনা তাও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।’

দপ্তর সূত্রে জানা যায়, দলের সিদ্ধান্ত ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি। কিন্তু দলের এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে নোয়াখালী পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে নোয়াখালী জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও নোয়াখালী পৌরসভা বিএনপির সভাপতি আবু নাছের এবং জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম। এই ঘটনায় তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এ ছাড়াও দলের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নির্বাচন করায় নাটোর ও বাগাতিপাড়া পৌরসভা নির্বাচনের তিন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত ব্যক্তিরা হলেন নাটোর পৌর নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক শেখ এমদাদুল হক আল মামুন এবং বাগাতিপাড়া পৌর নির্বাচনের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম।

সম্প্রতি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচন করায় বহিষ্কৃত হন গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা তৈমূর আলম খন্দকার ও এটি কামাল।

এদের মধ্যে সম্প্রতি নোয়াখালীর জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ আবু নাছের অনুতপ্ত হয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর আবেদন করলে সার্বিক দিক বিবেচনা করে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, দলের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কারণে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল তাদের বেশ কয়েকজনের আবেদন দপ্তরে জমা পড়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ মোতাবেক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে। দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আবু নাছেরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

মহানগর কমিটি নিয়ে মহিলা দলে ক্ষোভ

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ নতুন কমিটি নিয়ে পদবঞ্চিত নেত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে তারা বিক্ষোভ করেন। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে দেখা করে তারা কমিটি বিলুপ্ত করার দাবি জানান।

দুদিন আগে ১১ ফেব্রুয়ারি একজন আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবসহ ৮ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির কত সদস্য হবে বা মেয়াদ কত দিন হবে তা কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। এই নিয়েও সংগঠনের ভেতর নানা কথাবার্তা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক নায়েবা ইউসুফ ও সদস্য সচিব রুনা লায়লা রুনা এবং মহানগর দক্ষিণে রুমা আক্তার আর সদস্য সচিব করা হয় নাসিমা আক্তার কেয়াকে। যাদের কমিটির নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে তারা মহানগর রাজনীতিতে আনকোরা বলে অভিযোগ করেন বিক্ষুব্ধরা। তারা বলেন, নায়েবা ইউসুফ এবং নাসিমা আক্তার কেয়া আগে কখনো মহিলা দল করেননি। ঢাকা মহানগর সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা-ই নেই।

বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, রুমা আক্তার ও রুনা লায়লা রুনা মহানগরে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে ছিলেন না। অথচ বর্তমান ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এমনকি মহিলা দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে রাজনীতি করে আসছেন এমন নেত্রীদের ডিঙিয়ে একেবারে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়েছে।

মহিলা দলনেত্রী মনি আক্তার বলেন, তারা কমিটির বিলুপ্ত চান। যাদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে, দলের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা তাদের নেই। অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামে তারা এমন কিছু করেননি যে তাদের নেতৃত্বে আনতে হবে।