মাদারীপুরের রাজৈরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আব্দুস সালামকে (৫২) মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। মারধর শেষে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২ মে) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলা পরিষদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুর দেড়টার দিকে খন্দকার আব্দুস সালাম তার মোটরসাইকেলে জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য রাজৈর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যান। সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে প্রবেশ করতে না করতেই তার গাড়িটি থামান উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান পিয়াল। পরে পিয়ালের ভাই আশিকুর রহমান পাভেলসহ ১২ থেকে ১৫ জন মিলে খন্দকার আব্দুস সালামকে বেদম মারধর করে রক্তাক্ত করেন। পরে তারা কয়েকজন মিলে তার হাত-পা ধরে উপজেলা চত্বরের পুকুরে ফেলে দেন। এ সময় তার মোটরসাইকেলটিও পুকুরে ফেলে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে স্থানীয়রা আহত আওয়ামী লীগ নেতা সালামকে উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, গত ৩১ আগস্ট খালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আব্দুস সালাম। এ সময় আব্দুস সালাম রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক অংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা হাসান পল্লবীর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর পল্লবী বাদী হয়ে খন্দকার আব্দুস সালামসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ তুলে মামলা করেন। এরই জের ধরে পল্লবীর উপস্থিতিতে তার দুই ছেলে রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি পিয়াল ও পাভেলসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আব্দুস সালামকে একা পেয়ে মারধর করেন।
মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আব্দুস সালাম বলেন, আমি আমার একটি জমির দলিল করার জন্য উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে যাই। উপজেলায় প্রবেশ করতে না করতেই পল্লবীর উপস্থিতিতে আমার ওপরে অতর্কিত হামলা চালায় তার ছেলেরা। আমাকে মারধর করে পুকুরে ফেলে দেয়। তারপরও আবার পুকুরের পানিতে নেমেও ওরা আমাকে মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় রেখে চলে যায়। আমার পরনের পাজামা ছাড়া সব ছিঁড়ে ফেলেছে। পরে আমার মোটরসাইকেলটিও ওরা পুকুরে ফেলে দেয়। আমার পকেটে দলিল খরচের জন্য দুই লাখ টাকা, একটি স্বর্ণের চেইন, হাতঘড়ি, মোবাইল ফোন ছিল। মারধরের সময় ওরা আমার কাছে যা ছিল সব নিয়ে গেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান পিয়াল বলেন, তিনি (খন্দকার আব্দুস সালাম) সিনিয়র মানুষ, তাকে কেন মারধর করব? আমি রাজনীতি করি, তাই আমার দিকে আঙুল কেউ তুলতেই পারে। তবে আমি যখন উপজেলায় যাই তখন দেখি তিনি উপজেলার পুকুরের ভেতরে। পরে তাকে পুকুর থেকে তুলেছি, সমস্যার কথা শুনেছি। আমি শুনেছি, তিনি (খন্দকার আব্দুস সালাম) কোনো এক লোকের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে পড়ে গেছেন। তার আগে কিছু ঘটছে কিনা তা আমি জানি না। তাকে কারা মেরেছে আমরা সেটা আমরা জানি না।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, পল্লবী ও তার ছেলে পিয়াল এরা কেউ আওয়ামী লীগ বা দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে নেই। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান লীগের কর্মী। এরাই উপজেলায় হাঙ্গামা মারামারি করে পরিবেশ নষ্ট করে আসছে। আওয়ামী লীগে না থেকেও আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতাকে মারধর করে তার মোটরসাইকেলসহ পুকুরে ফেলে দেওয়া জঘন্যতম দুঃসাহস। আমরা আইনিভাবে এই ঘটনার বিচার দাবি করছি। একই সঙ্গে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
রাজৈর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় ঘোষ বলেন, রাজৈরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। একটি পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির অন্যটি স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের। মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা সভাপতির অনুসারী। তাকে যারা মারধর করেছে তারা সংসদ সদস্য শাজাহান খানের অনুসারী। মারধরের শিকার খন্দকার আব্দুস সালামের গুরুতর কোনো আঘাত নেই। তবে তাকে চড়থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারা হয়েছে। তার হার্টে ওপেন সার্জারি করা। তাই এখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ওই বিষয়ে যদি কোনো অভিযোগ আসে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।