জল্পনা-কল্পনা পেরিয়ে রাত পোহালেই অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। রবিবার (১৬ জানুয়ারি) নির্বাচনকে ঘিরে এখন উত্তাপ চলছে নারায়ণগঞ্জ শহর এলাকা জুড়ে। নির্বাচনে ৭ জন মেয়র প্রার্থী থাকলেও মূল আলোচনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া তৈমুর আলম খন্দকার। যদিও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মানুষ মনে করেন দুই প্রার্থীর মধ্যে কোনো তুলনা চলে না।
সেলিনা হায়াৎ আইভীর নিজের ইমেজ, অদম্য সাহস, তার পিতা আলী আহমদ চুনকার গৌরবময় রাজনৈতিক অধ্যায়, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, নগরীর উন্নয়ন, সর্বোপরি নৌকা প্রতীক তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে রেখেছে।
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্তরের মানুষ মনে করেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মেয়র হিসেবে সেলিনা হায়াৎ আইভী গত ১৫ বছরে নারায়ণগঞ্জে তার শক্ত ভিত গড়ে তুলেছেন। ব্যক্তিগত ইমেজের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার আচরণ তাকে সবার কাজে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের যে পরিবেশ বিরাজ করছে তাতে আগামী রোববারের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হবে-এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তারা। রিকশা চালক সলিম উদ্দিন মনে করেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই অনুষ্ঠিত হবে। তার মতে, নৌকার অবস্থান অনেক ভালো।
শহীদ মিনার এলাকার খাবার বিক্রেতা ইমরান মিয়া বলেন, নির্বাচনে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ হবে এটাই স্বাভাবিক। একজন আরেকজনকে দোষারোপ করবেন। এটা নির্বাচনে অংশ। তবে নির্বাচন এক তরফা হবে না। আশা করা যাচ্ছে, নির্বাচন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বীতাও হবে।
সিএনজি চালক শাহজাহান মোল্লা বলেন, রাজনীতি করার সময় পাই না। পেটের চিন্তা করি। তবে এখন পর্যন্ত যা বুঝতে পেরেছি, নৌকার প্রার্থী জেতার সম্ভাবনা বেশি। আইভী দুইবার মেয়র ছিলেন। শহরে অনেক কাজ করেছেন। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেছেন। সন্ত্রাস এবং চাঁদাবাজী কমিয়েছেন। তবে তৈমুর হলেও খারাপ হবে না।
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার লড়ছেন হাতি প্রতীক নিয়ে। প্রথমে তিনি বিএনপির প্রার্থী হলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝপথে এসে বিএনপির হাইকমান্ড তাকে দলের সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। সেখান থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র একটা বড় অংশই তৈমুর আলম খন্দকারের সঙ্গে নেই। এসব কারণে তিনি নির্বাচনী দৌড়ে বেশ পিছিয়ে আছেন বলে মনে করেন অনেকে।
নারায়ণগঞ্জ নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র বড় অংশই হাই কমান্ডের ভয়ে সিটি নির্বাচনে নীরব রয়েছে। তারা তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে কাজ করতে পারছে না। আরেকটা অংশ ব্যক্তি আইভীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এসব কারণে নির্বাচনের দৌড়ে তৈমুর বেশ পিছিয়ে আছেন।
তিনি বলেন, তৈমুর খন্দকার বিএনপির কেন্দ্রের সঙ্গে কথা না বলেই প্রার্থী হয়েছেন। তার ওপর দল আবার তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। সবমিলিয়ে তিনি একটু বেকায়দাতেই আছেন। আনিসুর রহমান মনে করেন, এবারের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। এখন পর্যন্ত কোনো শঙ্কা দেখা যাচ্ছে না।