মালয়েশিয়ার সোর্স কান্ট্রির শীর্ষ স্থানে থাকা বহু দেশকে পিছনে ফেলে এবারই প্রথম একচেটিয়া অগ্রাধিকার পাচ্ছে বাংলাদেশি কর্মী। এছাড়াও পুরনো কিছু নিয়মকানুন পরিবর্তন করে শ্রমিক বান্ধব আইন করেছে দেশটির অভিবাসন ও মানবসম্পদ বিভাগ। তাই বলা যায় দীর্ঘ ৩ বছর দেশটির শ্রমবাজারের আকাশের কালো মেঘ সরে পৌষের সকালের মিষ্টি রোদ পড়ছে বাংলাদেশি কর্মীদের পিঠে।
গতকাল শনিবার মালয়েশিয়ার গনমাধ্যম ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে এর একটি প্রতিবেদন সূত্রে এমন আভাস পাওয়া গিয়েছে। এমনিতেই পরিশ্রমী জাতি হিসেবে বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়ানদের কাছে পূর্ব পরিচিত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী আধুনিক মালয়েশিয়ার রুপকার মাহাথির মোহাম্মদ একাধিক বার বাংলাদেশিদের শ্রমের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন।
আশার কথা হলো আগের চেয়ে এবারের সমঝোতা স্মারকে কিছু বিষয় পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তন গুলো শ্রমিকদের কল্যান বয়ে আনবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ১. জিটুজি প্লাস পদ্ধতি থাকছে না। ২. যুক্ত হচ্ছে মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সি। ৩. কর্মীদের বাধ্যতামূলক বীমা থাকছে যে কোন পরিস্থিতিতে সহযোগিতা পাবেন। ৪.কর্মীদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা ও খরচ বহন করবে নিয়োগদাতা এতে করে অবৈধ হয়ে পড়ে আর আটকে পড়ে থাকবে না। ৫. চুক্তি মেয়াদে কর্মীদের দায়িত্ব নিতে হবে মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সিকেও এতে করে এজেন্সির প্রতারনা ও হয়রানি কমবে। ৬. বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত এতে করে দীর্ঘ সময় মালয়েশিয়ায় কাজের সুযোগ পাওয়া যাবে। তবে কর্মীদের মালয়েশিয়া যেতে অভিবাসন ব্যয় বা খরচ কতো হবে, তা জানা যাবে সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর।
এদিকে, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে সমঝোতা স্মারক সই করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদকে মালয়েশিয়ায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান আনুষ্ঠানিক চিঠিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীকে চলতি মাসের ১৬ বা ১৭ তারিখে সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য চিঠি পাঠিয়ে আমন্ত্রণ জানান মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী। সেদিন সকালে বাংলাদেশের সাথে সমঝোতা স্মারক অনুমোদন দেয় দেশটির মন্ত্রিসভা। একইসাথে ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন, “১৫ নভেম্বর আমার আগের চিঠি অনুসারে, আমি আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে ১০ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ কর্মীদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের অনুমোদন দিয়েছে যা মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সই হবে।”
এম সারাভানান চিঠিতে উল্লেখ করেন, “১৬ বা ১৭ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় আসার জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ জানাতে পেরে সম্মান বোধ করছি। এই বিষয়ে আপনার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। মালয়েশিয়া আপনাকে ও প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষা করছে।”
তবে, নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় ও কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মধ্যেও এ বিষয়ে যোগাযোগ অব্যহত রয়েছে। ১৬ বা ১৭ তারিখ নিয়ে মালয়েশিয়া পক্ষের আগ্রহ বেশি।
কারণ হিসেবে সূত্র বলছে, এরপরে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বেশ কিছু দিন মালয়েশিয়ায় থাকবেন না। আবার বাংলাদেশে ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণায়ের ব্যস্ততা রয়েছে।