খালেদা জিয়াকে এখনই লিভারের ‘উপযুক্ত’ চিকিৎসা দেওয়া না গেলে ‘উচ্চঝুঁকি’ দেখছেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড। আর এই উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে বিএনপিনেত্রীকে দ্রুত যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানিতে পাঠানোর কথা বলছেন তারা। যত দেরি হবে খালেদা জিয়ার ততো ক্ষতি হবে বলে ভাষ্য এই চিকিৎসকদের।
এতদিন বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে বক্তব্য এলেও প্রথমবারের মতো রবিবার কথা বলছিলেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা। সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসার সামনে টিমের সদস্যরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এসময় তারা খালেদার ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপাটিক প্রোটোসিস্টেমিক শান্ট বা টিপস ট্রিটমেন্টের কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসক অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার যকৃত বা লিভারে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। একবার এই রক্তক্ষরণ সামাল দেওয়া গেছে। তবে এখন তার যে অবস্থা, সেটি দ্বিতীয়বার সামাল দেওয়া কঠিন হবে। আশঙ্কা করছি, আবার যদি ব্লিডিং হয় তাহলে যদি এটাকে কন্ট্রোল করা সাপোর্ট করা যাবে না। ব্লিডিং হয়ে মৃত্যুঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে। হাই রিস্কে আছেন তিনি।
বিএনপি নেত্রীর রোগ নিয়ে প্রাথমিক একটি বর্ণনা দেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের গঠন করা মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান এফ এম সিদ্দিকী।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পেট থেকে চাকা চাকা রক্ত যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জানান, ইউনাইটেড হাসপাতালে একবার রক্ত দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেছে। কিন্তু এই ধরনের রোগীকে বারবার রক্ত দেওয়া সম্ভব নয়।
এই চিকিৎসক বলেন, ‘আশঙ্কা করছি, আবার যদি ব্লিডিং হয় তাহলে যদি এটাকে কন্ট্রোল করা সাপোর্ট করা যাবে না। ব্লিডিং হয়ে মৃত্যুঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে। হাই রিস্কে আছেন তিনি।’
বিদেশের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে তারা সবাই একই পরামর্শ দিয়েছেন। আমাদের অনেক বন্ধু, সহকর্মী বিদেশে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন। সবারই একই কথা। নতুন ব্লিডিং হওয়ার আগে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসা উচিত। কারণ এখন তিনি স্টাবল আছেন। তাই এখনো সময় আছে কিন্তু পরে পরিস্থিতি খারাপ হলে শিফট করা অসম্ভব হতে পারে। সেই অবস্থা কখন হতে পারে তা বলা অসম্ভব।
বিদেশে যাওয়ায় বিলম্ব হওয়া খালেদা জিয়ার ঝুঁকি বাড়ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি আজ থেকে চার মাস আগে তাকে বিদেশেযেতে পারতেন তাহলে হয়তো এই ঝুঁকিটা হয়তো হত না। এভাবে ব্লিডিং হয়তো হত না। আমরা কিন্তু এই ঝুঁকিটার কথা চিন্তা করেই বারবার বলেছি।
টিপস ট্রিটমেন্ট নিয়ে ইন্টারভ্যানশনাল গ্যাস্ট্রো অ্যানালিস্ট চিকিৎসক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমাদের শরীরে দুটি সার্কুলেশন সিস্টেম আছে। একটা হলো পোর্টাল সার্কুলেশন সিস্টেম, আরেকটা সিস্টেমিক সার্কুলেশন সিস্টেম। লিভারে দুটা সিস্টেমই কার্যকর। লিভারে টোটাল যে ব্লাড যায় তার তিন ভাগের এক ভাগ যায় সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে আর দুই ভাগ যায় পোর্টাল সার্কুলেশন থেকে। এখানে যেটা হয় তার পোর্টাল প্রেসার বেড়ে গেছে। কারণ তার লিভারের ভেতরের নরমাল চ্যানেলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে পোর্টাল প্রেসার বেড়ে যায়, আর যেসব ব্যান খাদ্যনালীতে থাকে, সেগুলো ফুলে ওঠে ফেটে যায়। সেজন্য সিভিআর ব্লিডিং হয়। এই সিচুয়েশনে আমরা যেটা করেছি সেটা ইন্টারন্যাশনাল প্রাকটিস। এটার পরে আবার ব্লিডিং হলে আরও কিছু জিনিস আছে যেগুলো আমরা করি, স্পেশাল কিছু কেমিক্যাল এজেন্ট আছে সেগুলো ইনজেক্ট করি অনেক সময়। আনফরচুনেটলি সেটা আমাদের দ্বারা সম্ভব হয়নি এবং এখন আমাদের দেশে সেই ওষুধগুলো পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, তৃতীয়ত যেটা আছে সেটা হলো টিপস। লিভারের ভেতরে টোটাল প্রেসার কমানোর জন্য সিস্টেমিক সার্কুলেশন এবং পোর্টাল সার্কুলেশনের মধ্যে একটা কমিউনিকেশন করে দেওয়া। এটা একটা হাইলি টেকনিক্যাল কাজ। এটা সচরাচর হয় না। আমাদের দেশে আমি দেখিনি কোনো টিপস করা রোগী এসেছে। রোগীদের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার ব্লিডিং হলে সার্ভাইভ করা কঠিন হয়ে যায়। সেজন্য এ সেন্টারগুলো মেইনলি আমেরিকা ও ইউরোপে হয়। বিশেষত ইউকে জার্মানি এবং ইউএসএ। ওইসব দেশে এগুলোর জন্য অ্যাডভানস সেন্টার আছে। তবে সেসব দেশেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেই। দুই-চারটা সেন্টার আছে। বিশ্বের সব রোগীরা সেসব সেন্টারে যায়।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. একিউ এম মহসিন, অধ্যাপক ডা. নূর উদ্দিন, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আল মামুন।