দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের চরম ভরাডুবি হয়েছে। উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ১টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী। বাকি ৪ টিতে স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেনি নৌকার প্রার্থীরা। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে নৌকার চরম ভরাডুবি হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার পূর্বজুড়ী ইউনিয়ন, জায়ফরনগর ও গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে নৌকার শোচনীয় পরাজয় হয়েছে।
উপজেলার পূর্বজুড়ী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদির ১৫৪১ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ওবায়েদুল ইসলাম রুয়েল ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ৪৭৫৬ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। গত নির্বাচনে নৌকা নিয়ে বিজয়ী বর্তমান চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন আহমদ পেয়েছেন ৩০৮৮ ভোট। একইভাবে পরাজয় বরণ করেছেন সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী জায়েদ আনোয়ার চৌধুরী। তিনি ৩০৭১টি ভোট পেয়ে হয়েছেন তৃতীয়। এ ইউনিয়নে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ঘোড়া প্রতিক নিয়ে ৯৪৭৯ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে বিএনপি’র স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুম রেজা। ৮০১০ ভোট পেয়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব (আনারস)।
গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৪ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন লেমন পেয়েছেন ৩৫০৩ টি ভোট। এ ইউনিয়নে বিএনপি’র স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ৫৪৭১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলার পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শ্রীকান্ত দাশ ৩৯৩৮ ভোট পেয়ে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আনফর আলীর কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ নেতা আনফর আলী ৪৩৬৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
উপজেলার একমাত্র সাগরনাল ইউনিয়নে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আব্দুর নূর ৭১৪৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদুল ইসলাম চৌধুরী লিয়াকত পেয়েছেন ৫২২৭ ভোট। জায়ফরনগর ইউনিয়নে নৌকা নিয়ে পরাজিত প্রার্থী জায়েদ আনোয়ার চৌধুরী বলেন, জনগণের রায় আমার পক্ষেই ছিল। আমি আমার প্রতিপক্ষের কাছে হারিনি। এ ইউনিয়নের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নেতাদের কাছেই নৌকা হেরেছে। ভোটের আগের দিন আমার দলের নেতারা আমি নির্বাচন থেকে সড়ে গেছি এমন অপপ্রচার করায় আমি জয়ী হতে পারি নি। পূর্বজুড়ী ইউনিয়নে নৌকার পরাজিত প্রার্থী আব্দুল কাদির বলেন, আমাদের দলের নেতারাই নৌকা বলে বলে ঘোড়ার পক্ষে কাজ করায় আমি পরাজিত হয়েছি। এছাড়াও প্রশাসন নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছে।
নাম প্রকাশে উপজেলা আওয়ামীলীগের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা নৌকার নির্বাচন করেনি। দলের অনেক সিনিয়র নেতা দিনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলেও রাতে স্বতন্ত্র ও বিএনপি’র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। অনেক নেতা শুধু মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছেন আর ভোট চেয়েছেন বিদ্রোহীদের জন্য। এছাড়াও দলীয় কোন্দল এবং যোগ্য প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক না দেওয়ায় এ ভরাডুবি হয়েছে বলে অনেকে আওয়ামীলীগ নেতা মনে করছেন। এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ বলেন, এ বারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুর্বল প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠে থাকায় নৌকার পরাজয় হয়েছে।