নিজের আসনে হারলে মমতা কি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে এবার তৃণমূল কংগ্রেসের পরাজয় আন্দাজ করা হলে শেষ পর্যন্ত ঘটতে চলেছে উল্টো ঘটনা। বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে জয় পেতে যাচ্ছেন মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস। প্রাথমিক ফলাফলে সেই আভাসই মিলেছে। জয় নিশ্চিত হলে বাংলায় হেট্রিক সরকার গড়বে তৃণমূল।

আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, ২৯৪ আসনের বিধানসভায় মমতার দল এরইমধ্যে ২০৭ টি আসনে এগিয়ে আছে। আর কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি ৮১ টি আসনে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশ সময় বেলা ৩ টার বেসরকারি ফল এটি।

পশ্চিমবঙ্গে যখন প্রায় সবদিকে তৃণমূলের জয়জয়কার সেখানে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। নিজের আসন নন্দীগ্রামে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে এখন পর্যন্ত পিছিয়ে রয়েছেন।

এমতাবস্থায় মমতা নন্দীগ্রামে হেরে গেলে তার টানা তৃতীয় মেয়াদে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সম্ভব কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ভারতের সংবিধানের আর্টিকেল ১৬৩ ও ১৬৪ অনুযায়ী, কাউকে মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হতে চাইলে বিধানসভার সদস্য হতে হবে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, রাজ্যের বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতারাই মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করবেন। আরও বলা হয়েছে, টানা ছয় মাস মন্ত্রী কিংবা মুখ্যমন্ত্রী থাকতে গেলে তাকে রাজ্যের কোনো একটি আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। অন্যথায় ১৮০ দিন পর তার পদ বাতিল হয়ে যাবে।

সংবিধানের এসব ধারা অনুযায়ী, তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতা ধরে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে হেরে যান তাহলে তিনি অন্য কোনো একটি আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে আসতে ৬ মাস সময় পাবেন। সেক্ষেত্রে দলের কোনো এক সদস্যকে পদত্যাগ করে তার আসনটি শুন্য করে দিতে হবে। আর সেখান থেকেই নির্বাচন করে রাজ্যের ২৯৪ আসনের বিধানসভার আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হবেন তিনি।

বিধান সভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে গত ১ এপ্রিল নন্দীগ্রামে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

রোববার সকাল থেকে ষষ্ঠ রাউন্ডের ভোট গণনায় নন্দীগ্রাম আসনে বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী ৭ হাজার ২৬২ ভোটে মমতার চেয়ে এগিয়ে আছেন। এ আসনে মোট ১৭ রাউন্ডে ভোট গণনা হবে বলে আনন্দবাজার জানিয়েছে।

হিন্দুস্তান টাইমসের খবর অনুযায়ী, সকাল ৯ টা ২০ মিনিটে প্রথম রাউন্ডে ১ হাজার ৪শ ৯৭ ভোটে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু। সকাল ৯ টা ৪৫ মিনিট দ্বিতীয় রাউন্ডের গণনা শেষে লিড বাড়িয়ে ৪,৫০০-এর বেশি ভোটে এগিয়ে যান শুভেন্দু।

তৃতীয় রাউন্ড শেষে মমতার সঙ্গে তার ভোটের ব্যবধান দাঁড়ায় ৭ হাজার ২৬২।

তবে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, পঞ্চম রাউন্ডের শেষে ৩,৬৮৬ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। কমেছে তার লিড। ব্যবধান কমিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী শুভেন্দু তারই একসময়ের ডান হাত, মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য। তিনি গত ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। গত ১ এপ্রিল নন্দীগ্রামে ভোট হয়। এই দফার ভোটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল নন্দীগ্রাম।

নির্বাচনের পর বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছিলেন মমতা ও শুভেন্দু। মমতা বলেছিলেন, তিনি নিশ্চিত, এই আসনে ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনিই জিতবেন। অন্যদিকে, শুভেন্দু বলেছিলেন, তিনি অন্তত ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে মমতাকে হারাবেন।

এক সময় মমতার ‘লেফটেনেন্ট’ হিসেবে পরিচিত শুভেন্দু এবারই প্রথম পদ্মফুল নিয়ে লড়ছেন। ২০১৬ সালে এ আসনে ঘাসফুলের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হওয়া শুভেন্দু গতবছর ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন।

মমতার সরকারে পরিবহন ও পরিবেশ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লোকসভায় তৃণমূলের প্রতিনিধিত্ব করা শুভেন্দু ১৯৯৫ সালে কংগ্রেসের হয়ে কাউন্সিলর নির্বাচনে জেতেন। নন্দীগ্রামে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রভাব সুবিদিত।

এবার ভোটের আগে মমতাকে হারানোর ‘চ্যালেঞ্জ’ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। তৃণমূলনেত্রী কলকাতায় নিজের আসন ছেড়ে নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণও করেন।

এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলে মমতা এই আসনে হেরে যাচ্ছেন।

ভারতীয় পত্রিকাগুলো বলছে, পশ্চিমবঙ্গের দুবারের মুখ্যমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত এই আসনে হেরে গেলে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাকে ঘিরে বিরোধীদের বৃহত্তর জোটের যে পরিকল্পনা দানা বাঁধছিল, তা মুখ থুবড়ে পড়বে বলে অনেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কেবল তাই নয়, মমতা যদি হেরেই যান, আর তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, সেক্ষেত্রে তৃণমূল কাকে মুখ্যমন্ত্রী করবে তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, রোববার সকাল থেকেই কালীঘাটের বাড়িতে বসে গণনায় চোখ রেখেছেন মমতা। ঘনিষ্ঠদের তিনি বলেছেন, তিনি আত্মবিশ্বাসী। ইভিএমের ভোট গণনা শুরু হলেই নন্দীগ্রামে তৃণমূলের পক্ষে ব্যবধান বাড়বে, ধারণা তার।

মমতা মুখ্যমন্ত্রী হতে না পারলে তার ভাইপো অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে এ পদে দেখা যেতে পারে। আবার প্রার্থীর মৃত্যুতে বেশ কয়েকটি আসনে ভোট স্থগিত থাকায় এবং একটি আসনে তৃণমূলেরই মৃত প্রার্থী এগিয়ে থাকায় মমতাকে জিতিয়ে আনার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচিতদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ যাকে তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচিত করবে, তিনিই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন।

মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিতদের কেউ না হলে ১৮০ দিনের মধ্যে তাকে কোনো একটি আসন থেকে জিতে আসতে হবে। তা না পারলে ছেড়ে দিতে হবে পদ। সে হিসেবে মমতাকেই তৃতীয় মেয়াদে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পেতে পারে পশ্চিম বাংলার জনগণ।