জামায়াতকে দূ’রে ঠেলা >> যেভাবে ভেস্তে গেল বিএনপির উদ্যো’গ!

২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে দূ’রে ঠেলতে বিএনপির একটি অংশ অনেকদূ’র অগ্রসর হলেই দলের অন্য একটি অংশ সেটি ভণ্ডুল করে দেয়; এমন প’রিস্থিতি কয়েক মাস ধ’রেই বিএনপিতে চলছে। সর্বশেষ গত শনিবার বিএনপির স্থা’য়ী কমিটির বৈঠকে নেওয়া এমন একটি সিদ্ধা’ন্ত ভণ্ডুল হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর এ ঘ’টনার জন্য অ’ভিযোগের আঙুল উঠছে স্থা’য়ী কমিটিরই একজন সদস্যের বি’রুদ্ধে।

জা’না গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কে’ন্দ্র করে উদ্ভূত প’রিস্থিতি এবং বেশ কয়েকজন নেতা মা’রা যাওয়ার ঘ’টনায় ২০ দলীয় জোটের শরিকরা নিজ অব’স্থান থেকে পৃথক পৃথক বিবৃতি দেবেন বলে সিদ্ধা’ন্ত হয়েছিল। এমন সিদ্ধা’ন্তের মূল কারণই ছিল—জামায়াতকে বিএনপির ক’র্মসূচি থেকে পৃথক করা বা দূ’রে রাখা এবং এভাবে আস্তে আস্তে জোট ভে’ঙে দিয়ে নতুনভাবে বৃহত্তর ঐক্যের প্রেক্ষাপট তৈরি করা। ওই দিন ভার্চুয়াল বৈঠকে জামায়াতকে দূ’রে রাখার এমন কৌশলে সম্মতি দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর এমন সিদ্ধা’ন্তে স্থা’য়ী কমিটির একাধিক সদস্য বৈঠকে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে তো কাজ হয়েই গেল।’ অর্থাৎ জামায়াতকে পৃথক করার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় তাঁরা সেদিন বৈঠকে সন্তোষ প্র’কাশ করেন বলে জা’না যায়।

কিন্তু ২৭ মা’র্চ শনিবার ২০ দলীয় জোটের একস’ঙ্গে বা যৌথ বিবৃতি গণমাধ্যমে পা’ঠানো হয়। এর অর্থ হলো—জামায়াত বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটেই আছে। ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বিএনপির স্থা’য়ী কমিটির সদস্য এবং ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। শুধু তা-ই নয়, বিএনপির দলীয় প্যাডে ওই বিবৃতি পাঠান তিনি। বিষয়টি নিয়ে দুই দিন ধ’রে বিএনপিতে তোলপাড় চলছে বলে জা’না গেছে। কারণ স্থা’য়ী কমিটির প্রায় সব সদস্যই পরের দিন রবিবার গণমাধ্যমে ওই বিবৃতি দেখে ক্ষু’ব্ধ হন। বিষয়টি স’ঙ্গে স’ঙ্গে লন্ডনে তারেক রহমানকে জা’নানো হয়। তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র একাধিক সদস্যকে এ ঘ’টনা সঠিকভাবে জে’নে প’রিস্থিতি নিষ্পত্তি ক’রতে বলেছেন। পাশাপাশি একাধিক সদস্যকে তিনি এ-ও বলেন, এটি পুরোপুরি দলের বি’রুদ্ধে অব’স্থান নেওয়া। সিনিয়র নেতারা দলীয় সিদ্ধা’ন্তের বাইরে কাজ করলে তিনি কাকে ট্রাস্ট করবেন—নেতাদের স’ঙ্গে আলাপকালে তারেক রহমান এমন প্রশ্নও তোলেন বলে জা’না যায়।

এদিকে ঢাকায় সিনিয়র নেতারা রবিবার টেলিফোনে নিজেদের মধ্যে আলাপকালে এ ঘ’টনায় উষ্মা প্র’কাশ করেন। কেউ কেউ এমনও বলেন যে দলের সর্বো’চ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সিদ্ধা’ন্ত এভাবে উল্টে দিলে আলোচনা বা রাজনীতি করেই লাভ কী! বেশ কয়েকজন নেতা তারেক রহমান এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে বিষয়টি জা’নান। তবে এমন ঘ’টনায় ফখরুলও অন্যদের মতো বিস্মিত ও বিব্রত হন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো থেকে জা’না যায়।

যদিও মহাসচিব থাকার কারণে দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির আশ’ঙ্কায় এ প্রশ্নে কালের কণ্ঠকে কোনো কথা বলতে রাজি হননি মির্জা ফখরুল। একই কারণে কথা বলতে রাজি হননি দলটির স্থা’য়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তবে স্থা’য়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় স্বী’কার করেন, ‘মানুষ হ’ত্যার প্রতিবাদে ২০ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর বিবৃতি পৃথকভাবে দেওয়ার সিদ্ধা’ন্তই হয়েছিল। ওইভাবে দেওয়া হলে বেশি দল এবং বিবৃতিও সবাই প্র’কাশ করত। কিন্তু নজরুল ভাই হয়তো অর্গানাইজ ক’রতে পারেননি।’ নাম প্র’কাশ না করার শর্তে দলটির আরেকজন নেতা বলেন, ‘ওই ঘ’টনায় নজরুল ইসলাম খানের কিছু কারিগরি তো আছে। তাঁরও নানাভাবে ম্যানেজ করে চলতে হয়।’

তবে স্থা’য়ী কমিটির সিদ্ধা’ন্তের বাইরে কিভাবে যৌথ বিবৃতি গণমাধ্যমে গেল সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান নজরুল ইসলাম খান। সোমবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধা’ন্ত নেওয়া হলে সেটি দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে জা’নানো হয়। ব্য’ক্তিগতভাবে আমি সেটি জা’নাতে পারি না।’

উল্টো প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘পৃথক বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধা’ন্ত ২০ দলীয় জোটের মধ্যে হয়েছে? হয়নি তো। আর বিএনপির স্থা’য়ী কমিটিতে হলে সেটি আমি বলতে পারব না।’ রবি ও সোমবার দুই দিনে অ’ন্তত ১০ বার চেষ্টার পর কথা বলা সম্ভব হয় নজরুল ইসলাম খানের স’ঙ্গে । সাংবাদিকরা অতি উৎসাহী হয়ে কেন এসব লিখছেন তা নিয়েও এ সময় প্রশ্ন তোলেন তিনি।

খোঁ’জ নিয়ে জা’না যায়, ২০ দলীয় জোটের শরিকদের স’ঙ্গে আলাপ করে বিবৃতির বিষয়ে শুধু তাদের মতামত নেন নজরুল ইসলাম খান। কাউকে পৃথকভাবে বিবৃতি দেওয়ার কথা তিনি বলেননি। যৌথ বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধা’ন্ত নজরুল ইসলাম খান এককভাবে নেন বলে জা’না গেছে। সাম্প্রতিককালে জামায়াতের ব্যাপারে তাঁর ‘বিশেষ দু’র্বলতা’ নিয়ে বিএনপির ভেতরে-বাইরে অনেক আলোচনা আছে।

জোটের শরিক এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ কালের কণ্ঠকে জা’নান, ‘নজরুল ইসলাম খান ফোন করে বিবৃতির বিষয়ে কেবল মতামত নিয়েছেন। পৃথক নাকি যৌথভাবে সেটি আম’রা জানি না।’

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০ দলের বিবৃতির ব্যাপারে আম’রা অবহিত। এর চেয়ে বেশি কিছু জা’না নেই।’

হেফাজতের ডাকা হরতালে বিএনপি সমর্থন না করলেও জামায়াতে ইসলামী নৈতিক সমর্থন দিয়েছিল। জামায়াতের এই পৃথক অব’স্থান নিয়েও বিএনপিতে আলোচনা আছে।

এর আগে গত জানুয়ারি মাসে বিএনপি স্থা’য়ী কমিটির বৈঠকে আ’লাদাভাবে ক’র্মসূচি পা’লনের সিদ্ধা’ন্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত সেটি ভণ্ডুল হয়ে যায়। ১৪ জানুয়ারি হ’ঠাৎ করেই জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দলকে নিয়ে ঢাকায় একটি স্মরণসভার আয়োজন করেন নজরুল ইসলাম খান। তখনো এ নিয়ে বিএনপিতে বিরূপ প্র’তিক্রিয়া হয় বলে জা’না যায়। কেউ কেউ অবশ্য তখন সন্দে’হ করেন, তাঁর ওই আয়োজনে হয়তো তারেক রহমানের সম্মতি থাকতে পারে। তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বঙ্গব’ন্ধুকে স্বাধীনতার স্থপতি বলে উল্লেখ করেন।