বিদায় হাজি সেলিম ?

হাজি সেলিমের রাজনৈতিক অধ্যায় কি শেষ হয়ে যাচ্ছে ? গত ছয় মাস ধরে হাজি সেলিমের রাজনৈতিক জীবনে একটি অশনি সং’কেত চলছে। প্রথমে তার ছেলে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্মাকে মা’রধ’রের ঘ’টনায় গ্রেফতার হলো। আজ হাইকোর্ট বিভাগ দু’র্নী’তির মামলায় তাকে নিম্ন আদালত যে দণ্ড দিয়েছিল সেই দ’ণ্ড বহাল রেখেছে।

এর ফলে হাজি সেলিমের রাজনৈতিক জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়লো। কারণ সংবিধান অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত অ’প’রা’ধে কেউ যদি ২ বছর বা তার বেশি দণ্ডিত হয় তাহলে সেই ব্যক্তির সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যায়।

এখন হাজি সেলিমের বি’রু’দ্ধে হাইকোর্ট যে রায় দিলো তাতে হাজি সেলিমের সংসদ সদস্য পদ আইনত বাতিল হওয়ার কথা। সম্প্রতি লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল কুয়েতের একটি আদালতে দণ্ডিত হওয়ায় তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়েছে এবং সেখানে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে তফসিল ঘোষণা করেছে।

হাজি সেলিমের হাইকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে তারও সংসদ সদস্য পদ আইনত বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কারণ এখন জনপ্রতিনিধি অধ্যাদেশের সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী যেকোনো আদালতে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে ২ বছর বা তার বেশি দণ্ডিত হলেই তার সংসদ সদস‌্য পদ চলে যায়।

দু’র্নী’তি একটি নৈতিক স্খলনজনিত অ’পরা’ধ। হাজি সেলিমের টলটলায়মান এই রাজনৈতিক পরিস্থিতির শুরু হয়েছিল অনেক আগে থেকেই। ওয়ান-ইলেভেনের সময় এই মামলাটির সূত্রপাত। সে সময় হাজি সেলিম দেশ থেকে পা’লিয়ে গি’য়েছিলেন। সে সময় তার অনুপস্থিতিকে বিচার করে তাকে দণ্ডতি করা হয়। এখন হাইকোর্ট যখন এই দণ্ডটি বহাল রাখলো তখন কেবল হাজি সেলিমের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হলো না, তার রাজনীতির পথ একেবারে রু”দ্ধ হয়ে গেলো বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

কারণ এই রায় যদি শেষ পর্যন্ত বহাল থাকে তাহলে আগামী ১০ বছর তো তিনি নির্বাচন করতেই পারবেন না, এমনকি এই দণ্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আরো ৫ বছর তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। অর্থাৎ আগামী ১৫ বছরের জন্য নির্বাচনের রাজনীতি থেকে তাকে দূরে থাকতে হবে। ফলে হাজি সেলিমের রাজনীতিকে বিদায় জানানো ছাড়া আর কোনাে উপায় নেই। এখন প্রশ্ন হলো হাইকোর্টের এই রায়ের পর প্রক্রিয়াটি কি হবে।

আইনজ্ঞরা এটি নিয়ে দুই রকমের মতামত দিয়েছেন। কিছু কিছু আইনজীবী বলছেন, হাইকোর্টের এই রায়ের বি’রু’দ্ধে যদি হাজি সেলিম আপিল করেন এবং আপিলে যদি হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে তাহলে তিনি বহাল থাকতে পারবেন। আপিল নিস্পত্তির পর যে রায় হবে সেই রায়টি চূড়ান্ত রায় হিসেবে গণ্য হবে।

আবার অন্য এক পক্ষ মনে করছেন, হাইকোর্টের এই রায়ের পর আপনা আপনি তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে এবং আপিল বিভাগে যতক্ষণ এই মামলা বিচারাধীন থাকবে ততক্ষণ তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকবেন না। তবে এটির সঙ্গে আইনগত ব্যাখ্যা জ’ড়িত এবং আদালতে এ বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্তভাবে ফয়সালা হবে।

কিন্তু আদালতে যে ফয়সালাই হোক না কেনো একজন এমপি হিসেবে স্বপদে থাকার নৈতিক অধিকার হাজি সেলিমের আছে কিনা সেই নৈতিক প্রশ্নটি এই মামলার রায়ের পরে সামনে এসেছে।