রাজনীতি থেকে বিদায় নিচ্ছেন ড. কামাল

ড. কামাল হোসেন তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অধ্যায়ের যবনিকাপাত ঘটাতে যাচ্ছেন। রাজনীতি থেকে তিনি অবসর গ্রহন করবেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা খুব শীঘ্রই আসবে বলে জানা গেছে। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে বিভক্ত, জর্জরিত গণফোরাম রাজনৈতিক দল হিসেবে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম বিভক্ত হয়। আজ মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বে জাতীয় প্রেসক্লাবে বর্ধিত সভা করে। সেই বর্ধিত সভায় ড. কামাল হোসেন কে বাদ দিয়েই ১০১ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। যে প্রস্তুতি কমিটি গণফোরামের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের লক্ষ্যে একটি কাউন্সিল অধিবেশন করবেন।

এর মধ্যদিয়ে গণফোরামের আনুষ্ঠানিক বিভক্তি পক্রিয়া সম্পন্ন হলো। এই বিভক্তি আগে থেকেই নিশ্চিত ছিল। কারণ মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে যখন গত কাউন্সিলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল এবং পরবর্তীতে মোস্তফা মোহসীন মন্টু, সুব্রত চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তখনই গণফোরামের ভাঙ্গন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে তার মূল দলে রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করেছেন। রেজা কিবরিয়া সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করার ফলে গণফোরাম কার্যত মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে।

ড. কামাল হোসেনের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, গণফোরামের কারণে নয়, বার্ধক্যজনিত কারণসহ নানা বাস্তবতায় তিনি এখন আর রাজনীতিতে আগ্রহী নন। উল্লেখ্য যে, গত কয়েকদিন আগেই ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন মোস্তফা মোহসীন মন্টু সহ গণফোরামের বিদ্রোহী অংশ। সেখানেও ড. কামাল হোসেন রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। রাজনীতি থেকে আনুষ্ঠানিক অবসর না নিলেও ২০১৮ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি প্রায় নিষ্ক্রিয়। করোনার প্রকোপ শুরু হলে হলে ড. কামাল হোসেনকে আর কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে থাকার কারণে ড. কামাল হোসেনের পরিবার পরিজনও চাচ্ছে না তাকে এখন প্রতক্ষ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে। বরং ড. কামাল হোসেন একজন আইনজীবী এবং বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে থাকবেন, এটি মনে করছেন তার পরিবারের সদস্যরা। সাম্প্রতিক সময়ে তার জামাতা ডেভিড বার্গম্যান কে নিয়ে নানা বিতর্ক, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে ড. কামাল হোসেনের মধ্যে রাজনীতির প্রতি একধরনের অনীহা তৈরি হয়েছিল। সেই অনীহা থেকেই তিনি রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। তবে এই ঘোষণা তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কবে দিবেন তা এখনো নিশ্চিত জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ ছিলেন ড. কামাল হোসেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যখন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে যখন পাকিস্তানে নিয়ে যায় তখন ড. কামাল হোসেনকেও সেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ৭২-এ মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারিতে দেশে আসে। ড. কামাল হোসেন তার সঙ্গে দেশে এসেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় ড. কামাল হোসেনকে বঙ্গবন্ধু প্রথম আইনমন্ত্রী, পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেছিলেন। কিন্তু ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর তার ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সে সময়ে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করার পরিবর্তে তিনি এক ধরণের নিষ্ক্রিয়তা অবলম্বন করেছিলেন। এই জন্য রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি সমালোচিতও বটে।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ের পর তিনি আওয়ামী লীগ থেকে সরে যান এবং গণফোরাম গঠন করেন। একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি যতটা আলোচিত, তার চেয়ে একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান আইনজীবী হিসেবেই তিনি বেশি আলোচিত এবং সমাদৃত। আইন পেশায় তার অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ৭২-এর সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন রাজনীতি থেকে শুধু অবসর নিবেন না, পেশাগত দায়িত্ব থেকেও ধীরে ধীরে ছুটি নিবেন বলে তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।