একেকজন বাংলাদেশি তরুণ-যুবা আঠারো থেকে বিশ লাখ টাকা খরচ করছেন কয়েক মাস বা বছর ধরে যাত্রা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো একটি দেশে পৌঁছাতে।
এই যাত্রায় কখনো কখনো তাদের বি;রূপ আবহাওয়ার মধ্যে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয়, কখনো উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে হয়, কখনো পুলিশের নি;র্মম নি;র্যাতনের শি;কার হতে হয়, কখনো বা মাসের পর মাস লুকিয়ে থাকতে হয় জঙ্গলে বা কোনো গোপন আস্তানায়।
প্রতিকূল এই যাত্রায় জীবনের ঝুঁ;কিও অনেক। লিবিয়াতে স;ন্ত্রা;সীদের গু;লিতে কিংবা সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে মাঝেমাঝেই মা;রা যান ইউরোপে আসতে আগ্রহী বাংলাদেশিরা।
কখনো তাদের ম;রদেহটা মেলে, কখনো তা-ও মেলে না। অথচ তারপরও হাজার হাজার মানুষ যে কোনো কারণেই হোক বাংলাদেশ ছেড়ে ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন।
তাদের এই আমরণ চেষ্টার পেছনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অভিবাসন নীতিও কিছুটা দায়ী। ইতালি বা পর্তুগালের মতো দেশগুলোতে কোনোক্রমে যদি কোনো একজন ব্যক্তি পৌঁছাতে পারেন, তাহলে কয়েক বছরের মধ্যেই বৈধ হয়ে যাওয়ার সুযোগ পান।
যাদের ভাগ্য একান্তই সহায়ক নয়, তারা চলে যান ফ্রান্সে, কারণ সে দেশে অবৈধভাবে থাকা যায় যুগের পর যুগ। এ রকম সুযোগ রয়েছে বলে অনেকেই চান কষ্ট করে হলেও সেসব দেশে পৌঁছাতে।
অন্যদিকের বাস্তবতা হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোরও নানা খাতে দক্ষ কর্মী প্রয়োজন। ইউরোপ তাই প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষকে বৈধভাবেই ইউরোপে প্রবেশ করার সুযোগ দিচ্ছে। সেই সুযোগ নিতে হলে প্রয়োজন একটু পরিকল্পনা এবং খানিকটা পরিশ্রম।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের একটি সহজ উপায় হচ্ছে উচ্চশিক্ষার জন্য আসা। যে আঠারো বা বিশ লাখ টাকা এবং সময় একজন মানুষ অবৈধ পথে ইউরোপে আসতে ব্যয় করেছেন, সেই সময় ও অর্থ তিনি ইউরোপে শিক্ষার্থী হিসেবে প্রবেশ করতে ব্যয় করলে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কেননা এই অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশেই বিদেশি শিক্ষার্থীরা চাকুরির সুযোগ পায়।
জার্মানি লেখাপড়া শেষে চাকুরি খোঁজার জন্যও এক বছরের বেশি সময় দেয়। মোটের উপর ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ তো রয়েছেই। আশার কথা হচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকহাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে ইউরোপের এই দেশটিতে এসেছেন।
এছাড়া, চাকরি সূত্রে ইউরোপে প্রবেশের সুযোগও এখন ক্রমশ বাড়ছে। জার্মানি কয়েকবছর আগে এ সংক্রান্ত আইন শিথিল করেছে। ফলে এখন বাংলাদেশে বসেও জার্মানির চাকরির বাজারে আবেদনের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশেও চাকরি খোঁজা যায়। এই কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমেই করা সম্ভব।
ইউরোপে বৈধভাবে প্রবেশের আরেকটি বড় উপায় হতে পারে বিভিন্ন সেবা খাত। বিশেষ করে কৃষি এবং স্বাস্থ্য সেবা খাতে দক্ষ শ্রমিকের অভাব ইউরোপের দেশগুলোতে প্রকট। জার্মানির কথা আমি জানি যেখানে নার্সের হাহাকার রয়েছে। ইউরোপের মানে প্রশিক্ষিতরা সহজেই এই খাতে চাকরি নিয়ে আসতে পারেন।
তবে, এজন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। ইউরোপের শ্রম বাজার যে ধরনের প্রশিক্ষিত জনশক্তি চায়, সে রকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বাংলাদেশে করা হলে বৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের হার বাড়ানো যাবে। বাংলাদেশ সরকার এজন্য চাইলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে প্রয়োজনীয় চুক্তি করতে পারে।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, শুধু অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের চিন্তা বাদ দিয়ে বৈধ পথে প্রবেশের পথ খুঁজতে হবে। আর এজন্য নিজেকেই তথ্য খুঁজতে হবে, পরিকল্পনা করতে হবে। বর্তমানের মোবাইল-ইন্টারনেটের যুগে কাজটি মোটেই কঠিন নয়। সূত্র: ডয়েচে ভেলে।