মালয়েশিয়ায় জিম্মি করে নির্যাতন, দেশে ফেরাতে সরকারের সাহায্য কামনা

মালয়েশিয়ায় দালালের কাছে জিম্মি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নুর উদ্দিনকে দেশে ফেরাতে সরকারের সাহায্য কামনা করছেন তার বাবা-মা। এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার জগন্নাথপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার।

নুর উদ্দিন উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের গন্ধর্ব্বপুর গ্রামের মো. গৌছ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ভিভিও কলের মাধ্যমে নির্যাতনের চিত্র তুলে তার পরিবারকে জানিয়েছেন, তিনি এখন দালালদের কাছে জিম্মি আছেন। সবশেষ গত রোববার তাকে ঘরে বন্দী করে আবারও মারধর করা হয়েছে। সেসময় তাকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য বলা হয়।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নুর উদ্দিন বসতবাড়ি বিক্রি করে দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের বড়বাড়ি গ্রামের মো. নজরুল ইসলামের মাধ্যমে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে মালয়েশিয়ায় যান। নজরুল ইসলাম প্রত্যেক মাসে ৪০ হাজার টাকা বেতনে কোম্পানিতে কাজ দেওয়ার কথা বলে সেখানে নিয়ে যান।

তবে মালয়েশিয়া যাওয়ার পর দালাল নজরুল ইসলাম নুর উদ্দিনের ওপর নানাভাবে অত্যাচার শুরু করেন। মালয়েশিয়ায় যে ভিসা দিয়ে নুর উদ্দিনকে নেওয়ার কথা ছিল, ওই ভিসা না দিয়ে অন্য ভিসা দিয়েছেন তাকে। এতে করে নুর উদ্দিনের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

নুর উদ্দিনের পরিবার বিষয়টি জানতে পেয়ে নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি তাদের। পরে দালালের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তাদের ছেলে ভালো কোম্পানিতে চাকরি করছেন। ৩ মাস পর ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে দেবে।

এদিকে দালাল নজরুল কাজের কথা বলে মালয়েশিয়ার অন্য স্থানে নিয়ে যান নুর উদ্দিনকে। সেখানেই তাকে ১ বছরের জন্য বিক্রি করে আসেন বলে অভিযোগ করেন নুর উদ্দিনের পরিবার। নুর উদ্দিনকে রেখে আসার পর সেখানকার লোকজন তাকে মারধর করে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে গৌছ উদ্দিন তার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য ঋণ করে আরও ১ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন।পরে দালাল নজরুল ইসলাম দেশে চলে আসেন।

গৌছউদ্দিন ও তার স্ত্রী হাওয়ারুন বেগম জানান, বাড়ি বিক্রি করে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে মালয়েশিয়া পাঠানো হয়েছে। দালাল নজরুল ইসলাম বলেছিল প্রত্যেক মাসে ৪০ হাজার টাকা দেবে।বিদেশ যাওয়ার পর এখনো একটা টাকাও দেয় নাই। উল্টো ছেলেকে দেশে পাঠানোর কথা বলে আরও ১ লাখ টাকা নিয়েছে। এখন আরও ২০ হাজার টাকা দাবি করে।

তারা আরও বলেন, আমাদের যা কিছু ছিল সব কিছু বিক্রয় করে দিয়েছি। ঋণ করে ১ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন দেওয়ার মতো আমাদের কাছে আর কিছু নাই। আমরা অসহায় হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন, আমাদের ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করুন।নতুবা আমাদের ছেলেকে তারা মেরে ফেলবে।

এ ব্যাপারে জানতে দালাল নজরুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি দালাল নয়। কোম্পানির মাধ্যমে আমার শালার আত্নীয় পরিচয় দিয়ে এজেন্সির মাধ্যমে নুর উদ্দিন মালয়েশিয়া গিয়েছিল। ভিসার মেয়াদ ১ বছর ছিল। আমার মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। আর কোনো টাকা দেওয়া হয় নাই।মালেশিয়া যাওয়ার সময় ট্রাভেলস টাকা নিছে, এখন আমার ওপর মামলা দেয়-এটা কোন ধরনের বিচার।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছেলের বাবা আমার বাবা-মাকে নিয়ে গালাগালি করছে। আমি নুর উদ্দিনের জন্য যা করছি-তার বাবাও এ কাজ করবেন না।

জগন্নাথপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দিপংকর জানান, নুর উদ্দিন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে বিদেশ গেছে। এখন তিনি মালয়েশিয়ায় আছেন। তার সমস্যার বিষয়ে ওসি স্যার বলছেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ দেওয়ার জন্য। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।