মালয়েশিয়ায় ত্রাণের জন্য অসহায় প্রবাসীদের হাহাকার

করোনাভাইরাস মহামারীতে মালয়েশিয়ায় ঘরবন্দি অসহায় প্রবাসীদের মাঝে ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। দেশটিতে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির উদ্যোগে পৃথক পৃথক ভাবে অসহায় প্রবাসীদের মাঝে কিছু কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্ত কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের একগুঁয়েমি ও সিদ্ধান্তহীনতার দরুণ অবরুদ্ধ অধিকাংশ ক্ষুধার্ত প্রবাসীদের ভাগ্যে ত্রাণ জুটছে না। অসহায় অশিক্ষিত লাখ লাখ কর্মী অনলাইনে হাই কমিশনের বিতর্কিত ত্রাণের ফরম পূরণ করতে না পারায় তাদের ভাগ্যে ত্রাণ জুটছে না। ত্রাণ না পেয়ে অসহায় কর্মীরা চরমভাবে ক্ষুদ্ধ। কুয়ালালামপুর থেকে একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সরকার মালয়েশিয়ায় অসহায় বাংলাদেশি কর্মীদের মাঝে দ্রুত ত্রাণ সামগ্রি পৌঁছে দিতে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনকে ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। কুয়ালালামপুরস্থ হাই কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম বাংলাদেশি কমিউনিটির কারো সাথে পরামর্শ না নিয়ে ত্রাণ নেয়ার জন্য অনলাইনে ফরম পূরণ করার আহবান জানান। এতে দামি দামি কন্ডোমিনিয়ামে বসবাসকারী শিক্ষিত বাংলাদেশিরাই এ সুযোগটি লুফে নেয়। সাড়ে ছয় হাজার প্রবাসী অনলাইনে ফরম পূরণ করে হাই কমিশনের ত্রাণ নিচ্ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ স্বচ্ছল প্রবাসী। অসহায় ক্ষুধার্ত প্রবাসীরা ত্রাণের জন্য হাই কমিশনে দফায় দফায় মোবাইল ফোন করেও কোনো সাড়া পাচ্ছে না। মালয়েশিয়া থেকে একাধিক ভুক্তভোগী প্রবাসী কর্মী এসব তথ্য জানিয়েছে।

হাই কমিশন স্থানীয় একটি এনজিও এম টি ইউ সি’র মাধ্যমে ফরম পূরণকারীদের মাঝে ত্রাণের প্যাকেট বিতরণ করছে। আজ মঙ্গলবার হাই কমিশনার মো.শহিদুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কুয়ালালামপুর থেকে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত ২৫ এপ্রিল হাই কমিশন কুয়ালালামপু ও সেলাঙ্গরের বিভিন্ন এলাকায় ২০০ প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করে। এর মধ্যে মাত্র দুই-একজন অসহায় প্রবাসী বাকি সবাই দামি দামি কন্ডোমিনিয়ামে থাকেন। ত্রাণ প্রাপ্তদের অনেকেই ২৫০০ থেকে ৩০০০ রিংগিত ভাড়া দিয়ে কন্ডোমিনিয়ামে থাকেন বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ মালয়েশিয়া শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অহিদুর রহমান আজ মঙ্গলবার কুয়ালালামপুর থেকে ইনকিলাবকে জানান, হাই কমিশনের একগুঁয়েমির দরুণ মালয়েশিয়ায় ত্রাণ বিতরণে সরকারের ভালো উদ্যোগকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে। হাই কমিশনের বিতরণ ত্রাণ ২০% অসহায় কর্মীর ভাগ্যেও জুটেনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাই কমিশনার মালয়েশিয়ার বিভিন্ন জেলার সামাজিক সংগঠনগুলোকে ডেকে পরামর্শ নিয়ে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নিলে অসহায় ক্ষুধার্ত প্রবাসীরা ত্রাণের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতো না। তবে শোনা যাচ্ছে হাই কমিশন পরবর্তী উদ্যোগে নতুন প্রক্রিয়ায় ত্রাণ বিতরণের চেষ্টা চালাবে।

আজ মালয়েশিয়ার পেনাংস্থ জর্জ টাউনের কমতার থেকে ঝিনাইদহের প্রবাসী কর্মী কবির শেখ, খবির, মোকাব্বির, নাহিদ ও যশোরের মাসুম কান্না জড়িত কন্ঠে ইনকিলাবকে বলেন, দশ দিন আগে জর্জ টাউনের প্রবাসী ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের ওয়ান্ডারলাইট মিনি মার্কেটের অসহায় শত শত প্রবাসী কর্মীর নাম , পাসপোর্ট নম্বর ও মোবাইল নম্বর জমা নেয়া হলেও হাই কমিশনের কোনো ত্রাণ মেলেনি। পেনাংস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয়ের মাধ্যমে কিছু ত্রাণ পাঠালেও তা’ অসহায় ক্ষুধার্ত প্রবাসী কর্মীদের ভাগ্যে জুটেনি বলেও অভিযোগ উঠেছে।

মালয়েশিয়ার পেনাংস্থ মুসলিম কমিউনিটি অব বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট প্রবাসী ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন রিপন আজ ইনকিলাবকে বলেন, পেনাংয়ে লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি অনেক দিন যাবত ঘরবন্দি। হাই কমিশনের ত্রাণ এসব প্রবাসীদের ভাগ্যে এখনো জুটেনি। শুনেছি অসহায় প্রবাসীদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনের উদ্যোগে যথা সাধ্য অসহায় প্রবাসী ও রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম চলছে। জাতীয় শ্রমিক লীগ মালয়েশিয়া শাখার সভাপতি নাজমুল ইসলাম বাবুল আজ ইনকিলাবকে জানান, হাই কমিশন থেকে ত্রাণ নেয়ার জন্য বেশির ভাগই স্বচ্ছল প্রবাসী তারা সরকারি বিনা মূল্যের ত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে সখে সখে অনলাইনে আবেদন করেছে। তাদের ত্রাণের প্রয়োজন ছিল না। আর অসহায় ক্ষুধার্ত কর্মীরা ত্রাণ পাচ্ছে না। গতকাল পর্যন্ত হাই কমিশন সাড়ে ৫ হাজার প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করছে বলে তিনি দাবি করেন।