বিমানবন্দর তো নয়, যেন গোটা এক শহর!

বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর চাঙ্গি। আপনি হয়তো ভাবছেন ইউরোপ বা আমেরিকার কোনো বিমানবন্দর হবে হয়তো। কিন্তু নাহ্‌, এটি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। বিমানে করে কোনো আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ভ্রমণ করতে গেলে বিমান বন্দরে ২-৩ ঘণ্টা আগে হাজির থাকতে হয়। কেননা এয়ারপোর্টে পৌঁছার পর বিমানে ওঠার আগ পর্যন্ত অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু যাবতীয় ধাপ পার করতে প্রত্যেক যাত্রীর গড়ে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় লাগে এ বিমান বন্দরে। কোনো কোনো এয়ারপোর্টে এর চেয়ে বেশি সময়ও লাগে। বিলাসবহুল তো বটেই, যাত্রীসেবা প্রদানেও সেরা। এই বিমানবন্দরটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ট্রানজিট পয়েন্ট। চাঙ্গি বিমানবন্দর আধুনিক প্রযুক্তি সহায়তা ও নির্মাণশৈলীতে সবাইকে ছাড়িয়ে।

বিমানবন্দরের আধুনিকায়নে সবচেয়ে ভালো উদাহরণ এটি। এই বিমানবন্দরকে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম বিলাসবহুল বিমানবন্দর। স্থাপত্যশৈলীতেও অনন্য এটি। বিমানবন্দরটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ১.৭ বিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার। রাতের বিমানবন্দর যে কারো চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। দূর থেকে এই বিমানবন্দরের কাচের দেয়াল ঝলমল করে।

যাত্রীসেবায় চাঙ্গি বিমানবন্দর অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ঘুমানোর জন্য রয়েছে আরামদায়ক কাউচ। চাঙ্গিতে আছে ফ্রি ওয়াইফাই আছে মোবাইল চার্জ দেওয়ার জন্য রয়েছে চার্জি পোর্ট। এখানে আছে সারি সারি সেল্ফ চেক ইনের ব্যবস্থা। চাঙ্গির সবই ডিজিটালাইড। এই এয়ারপোর্টে ৪টি টার্মিনাল আছে। এই বিমানবন্দরের সব থেকে নজর কাড়া স্থাপনা হলো জুয়েল চাঙ্গি। টার্মিনাল এক এর সামনে খোলা পার্কিংয়ের জয়গায় এটি। গ্লাস ও ইস্পাতের তৈরি এই স্থাপনার উচ্চতা ৪ তলা ভবনের সমান। এখানে আছে প্রায় ২৮০টির মতো দোকান। একটি আবাসিক হোটেল এবং একটি সিনেমা হল রয়েছে। সবচেয়ে আর্কষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এর কেন্দ্রস্থল। এখানে আছে বিশ্বের সর্বোচ্চ ইনডোর ওয়াটার ফল বা জলপ্রপাত। যার উচ্চতা ৪০ মিটার। এই জলপ্রপাত থেকে ইস্পাত ও কাচের বিশাল গম্বুজের মধ্য দিয়ে পানি পড়ছে অনবরত। রেইন ভোর্টেক্স নামে পরিচিত জলপ্রপাতটি ইতোমধ্যে বিশ্বের বিখ্যাত টুরিস্ট কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছে। যেকোনো টার্মিনাল থেকেই সহজে ঘুরে আসতে পারবেন চাঙ্গি জুয়েল থেকে।

চাঙ্গি বিমানবন্দরের বেশির ভাগ ফ্লোর কার্পেট দিয়ে মোড়ানো। এর মাঝে একটু পর পর বসানো আছে অটো ওয়াক যার মাধ্যমে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করতে পারবেন। আছে অংসখ্য ডিউটি-ফ্রি শপ। এই এয়ারপোর্টে আরো আছে দৃষ্টিনন্দন অর্কিড বাগান। বাগানের মাঝখানে আছে একটি জলাধার আর তার মধ্যে রঙ্গিন কিছু মাছ। এই জলাধারের পাশে বসলে কখন যে আপনার সময় চলে যাবে তা টেরই পাবেন নাহ। এই বিমানবন্দরে শিশুদের জন্য রয়েছে প্লে গ্রাউন্ড। শিশুদের সময় ভালো কাটার জন্যই এই ব্যবস্থা। চাঙ্গি এয়ারপোর্টের এখানে সেখানে শিল্পকর্মের ছড়াছড়ি। এখানে কেউ চাইলে ঘণ্টা নয়তো মাসের পর মাস কাটিয়ে দিতে পারেন অনায়াসে।

এই বিমানবন্দরের বিশালতা সম্পর্কে ধারণা পেতে নিচের তথ্যগুলোতে একপলক চোখ বুলিয়ে নিন।

চাঙ্গি বিমানবন্দরে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৮৫ মিলিয়ন। চাঙ্গির আয়তন ১৩ লাখ ৭৩ হাজার বর্গফুট।

টার্মিনাল ১
চাঙ্গির প্রথম টার্মিনালটি চালু হয় ১ জুলাই ১৯৮১ সালে। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। টার্মিনাল ১ এর যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ২৪ মিলিয়ন। এর আয়তন ৩৩ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট।

টার্মিনাল ২
টার্মিনাল ২ চালু করা হয় ২২ নভেম্বর ১৯৯০ সালে। সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয় ১ জুন ১৯৯১ সালে। টার্মিনাল ২ এর আয়তন ৩৮ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুট। যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ২৩ মিলিয়ন।

টার্মিনাল ৩
টার্মিনাল ৩ তৈরি করা হয় ৯ জানুয়ারি ২০০৮ সালে এবং যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় একই বছরের ২৫ জুলাই। এই টার্মিনালের আয়তন ৪১ লাখ বর্গফুট। এটির যাত্রী ক্ষমতা ২২ মিলিয়ন।

টার্মিনাল ৪
টার্মিনাল ৪ এর যাত্রা শুরু হয় ৩১ অক্টোবর ২০১৭ সালে এবং যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় ৩ আগস্ট ২০১৮ সালে। এর আয়তন ২১ লাখ বর্গফুট। যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ১৬ মিলিয়ন।

চাঙ্গি জুয়েল
চাঙ্গি জুয়েল আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয় ১৭ এপ্রিল ২০১৯ সালে। যাত্রী সাধারণ এর জন্য উন্মুক্ত করা হয় একই বছরের ১৮ অক্টোবর। এটির ধারণ ক্ষমতা ৩ মিলিয়ন। এর আয়তন ৩ লাখ ৮০ হাজার বর্গফুট।