জর্জ এলিয়টের সর্বাধিক বিখ্যাত উপন্যাস মিডলমার্চ বইটি বিবিসির রেডিও ফোরকে এমন দারুণ কিছু মোটা মোটা বই পড়ার কথা ভাবতে বাধ্য করেছে। যে উপন্যাসগুলো বিশাল হয় সেই মোটা বইগুলো সামলানো বা সেগুলো পড়ার ক্ষেত্রে অনেকের অনীহা দেখা যায়। অনীহার কিছু নেই। বিশেষত ই-রিডারের যুগে হাজার হাজার-শব্দকে পকেটে নিয়ে চলা কোনো সমস্যা নয়।
এখানে সাহিত্যের পাঁচটি দুর্দান্ত উপন্যাসের নাম দেয়া হলো যা সবার তালিকায় যুক্ত করা উচিত। আপনার সাহস থাকলে পড়ুন…
১. মোবি-ডিক; বা, হরম্যান মেলভিলের দ্য হোয়েল (৭২০ পৃষ্ঠা)
তালিকাটি শুরু করছি ছোট একটি ৭২০ পৃষ্ঠার বই দিয়ে, এটি আমেরিকান লেখক মেলভিলির এক অনবদ্য সৃষ্টি। মবি-ডিকের গল্প তার কেন্দ্রীয় চরিত্র আহাবকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। আহাব হলেন, হোয়েলিং শিপ পিকোডের ক্যাপ্টেন। তিনি একটি বিশালাকার হোয়াইট স্পার্ম তিমির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া। কারণ এই তিমি তার হাঁটুর নিচ থেকে পায়ের অংশ নিয়ে গেছে। এজন্য তিনি পাগলের মতো সাগরে সেই তিমির অনুসন্ধান করে চলেন।
গল্পের বর্ণনাকারী হলেন ইসমায়েল নামে একজন নাবিক। এবং সাহিত্যে অন্যতম জনপ্রিয় প্রথম লাইনটি হলো: ‘আমাকে ইসমায়েল ডাকুন।’
বইটি অদ্ভুত, পাণ্ডিত্যপূর্ণ, মজার, গভীর অর্থবহ এবং আমেরিকার অন্যতম জনপ্রিয় উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত।
২. হানিয়া ইয়ানাগিহারের আ লিটল লাইফ (৭৩৬ পৃষ্ঠা)
এই বইটি ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। উপন্যাসটি গড়ে উঠেছে চার বন্ধুর জীবনের গল্পকে ঘিরে। কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে তারা অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে নিউ ইয়র্ক সিটিতে যায়।
জেবি হলেন শিল্পী, উইলিয়াম একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিনেতা এবং ম্যালকম একজন স্থপতি। তবে জুড – নিজেকে ক্ষতি করতে চাওয়া একজন আইনজীবী। যার রয়েছে একটি রহস্যময় অতীত- বইটি সেখানেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। গল্পটি যতোই এগিয়ে যায়. জুডের দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি ততোই প্রকাশ পেতে থাকে। গল্পটি মারাত্মক কষ্টের এবং মন খারাপ করে দেয়ার মতো। যেখানে কয়েক দশকের গল্প বলা হয়েছে এবং বইটির শেষ পৃষ্ঠাগুলো পড়ার সময় আপনার চোখ বেয়ে কান্না আসবেই।
৩. জর্জ এলিয়টের মিডলমার্চ (৮৮০ পৃষ্ঠা)
বইটি এলিয়টের মাস্টারপিস হিসাবে বিবেচিত, উপন্যাসটি মিডলমার্চ নামে একটি কাল্পনিক শহরের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জীবন নিয়ে বিশ্লেষণ করে। ভদ্র সম্প্রদায়ের ভূমি মালিক থেকে শুরু করে খামার শ্রমিক বা কারখানার শ্রমিক পর্যন্ত। তবে মূল ফোকাস ছিল দুটি চরিত্রকে ঘিরে, একজন হলেন জেদি এবং দৃঢ়-ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন ডোরোথিয়া ব্রুক এবং অপরজন আদর্শবাদী টারটিয়াস লিডগেটের প্রতি, তারা দুজনেই বিপর্যস্ত বৈবাহিক জীবনের শিকার ছিলেন।
বইটি ১৯ শতকে লেখা হলেও এতে রয়েছে অবিশ্বাস্যরকম আধুনিকতা বোধ। কারণ বইটিতে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির সীমাবদ্ধতা এবং এই ত্রুটিপূর্ণ দুনিয়ায় একজন নৈতিক ব্যক্তি হওয়ার পথে নানা সংগ্রামের মতো বড় থিমগুলো বিশ্লেষণ করা হয়।
৪. চার্লস ডিকেন্সের ব্লিক হাউস (৯২৮ পৃষ্ঠা)
ব্লিক হাউস হল ডিকেন্সের দীর্ঘতম উপন্যাস। বইটি জার্নডাইস পরিবারের গল্পকে ঘিরে লেখা হয়েছে। তাদের আশা উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পদ পাওয়া। কিন্তু সেই স্বপ্ন বার বার ব্যর্থতার মুখে পড়ছে। কারণ জার্নডাইস অ্যান্ড জার্নডাইস মামলাটি দীর্ঘকাল ধরে আইনি মারপ্যাঁচের মধ্যে চলছে।
যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এবং মামলাটি ‘এত জটিল হয়ে উঠেছে যে জীবদ্দশায় কোন মানুষ তা বুঝতে পারে না।’
ডিকেন্সস এই বইটিতে কোর্ট অব চ্যান্সেরি নিয়ে ব্যঙ্গ করেন, যে আদালতে একটি মামলা কয়েক দশক ধরে চলতে পারে। উপন্যাসটিতে রয়েছে অসংখ্য চরিত্র এবং বেশ কয়েকটি পার্শ্ব কাহিনিও রয়েছে।
৫. মিগুয়েল ডি সার্ভেন্টেসের ডন কুইকসোট (৯৭৬ পৃষ্ঠা)
ডন কুইকসোট একজন মধ্যবয়সী স্প্যানিশ ভদ্রলোক, যিনি অনেকগুলো বীরদের রোম্যান্স পড়েন। সেই থেকে তলোয়ার তুলে একজন ভবঘুরে বীর হয়ে ওঠার সিদ্ধান্ত নেন। নিজের পুরানো ঘোড়া এবং বাস্তববাদী মানসিকতা নিয়ে নিয়ে বিশ্বব্যাপী অভিযাত্রার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন।
ডন কুইক্সোটের ‘বীরত্বপূর্ণ’ কাজের মধ্যে রয়েছে উইন্ডমিলের সাথে লড়াই করার চেষ্টা করা যেগুলোকে তিনি দৈত্য ভেবে ভুল করেছিলেন এমনকি তিনি একটি এক পাল ভেড়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেন। এই প্রভাবশালী সাহিত্যকে প্রায়শই প্রথম আধুনিক উপন্যাস হিসাবে বিবেচনা করা হয়।