যে ছাত্রীকে দেখে ভয়ে পালাতেন তার সাথেই শামীম ওসমানের ৩২ বছর

শামীম ওসমান, যার নাম শুনেই শ্রদ্ধায় বা নানা কারণেই ভয় পেতেন মানুষ। তার কর্মী সম*র্থকেরাও তার সামনে শ্রদ্ধায় মাথা তুলে কথা বলতেন না।

আর তিনিই কিনা সেসময় সাধারণ একজন কলেজ ছাত্রীকে দেখে ভয় পেতেন! দৌঁড়ে পালাতেন!

আর সেই কলেজ ছাত্রীটি আর কেউ নন। যেই কলেজ ছাত্রীকে দেখে ভয় পেয়ে দৌঁড়ে পালাতেন শামীম ওসমান, সেই কলেজ ছাত্রীটি ছিলেন আজকের লিপি ওসমান।

বৃহস্পতিবার ১১ জুলাই এই দম্পতির ৩২ তম বিবাহ বার্ষিকী। ১৯৮৭ সালের এই দিনে তারা একে অপরের সঙ্গে সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার ব্রত নিয়েই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এই বন্ধন অটুট থাকুক আমৃ*** এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তারা একে অপরকে মন খুলে প্রাণ খুলে ভালোবাসুক অতীতের মতো করে। এই দম্পতির বিবাহ বার্ষিকীতে নারায়ণগঞ্জ টুডে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

এখন পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে লিপি ওসমানকে দেখে দৌঁড়ে পালাতেন শামীম ওসমান, কেন? এমন প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক। তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক ভালোবেসে, শ্রদ্ধায় তার কর্মী সম*র্থকদের কাছ থেকে ‘সিংহ পুরুষ’ উপাধি পাওয়া আজকের সাংসদ শামীম ওসমানের দৌঁড়ে পালানোর সেই ঘটনা।

কম বেশি প্রায় সব মানুষের কাছেই পরিচত ‘শামীম ওসমান’ নামটি। তিনি দ্বিতীয় বারের মতো নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছেন সংসদে। অনেকের কাছে শামীম ওসমান মানেই কর্কশ, ভয়ঙ্কর বদমেজাজী একজন মানুষ।

‘গডফাদার’ তকমাও তাঁকে দেয়া হয়েছে ইতোপূর্বে। আর তিনিও বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যেই ব্যাখ্যা করেছিলেন কেন তিনি ‘গডফাদার’। জানিয়েছিলেন এর নেপথ্য কারণও। প্রায় সময় এই তকমা দিয়েই তাঁকে করা হয় সংবাদ শিরোনাম। তবে শামীম ওসমান যে ভয়ঙ্কর বদমেজাজী জানার বাইরেও একজন কোমল মনের মানুষ এবং একজন প্রেমিক পুরুষ, সে কথা জানেন কজন?

ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারে জন্ম নেয়া শামীম ওসমান ছিলেন তুখোড় ছাত্রনেতা। তাবৎ নারায়ণগঞ্জের মানুষই তাঁকে ভয় পেতেন। তাঁর দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁকে ভালোবেসে ‘সিংহ পুরুষ’ উপাধিও দিয়েছিলেন। কিন্তু এই সিংহ পুরুষও যে ভয় পেতেন, ভয়ে দৌড়েও পালাতেন, সেও আবার একজন নারীকে! তা জানতেন কজন?

শামীম ওসমানের সহধর্মীণি লিপি ওসমান। যাঁকে তিনি ভালোবাসতেন সেই কলেজ জীবন থেকেই। তবে প্রেমের কথা বলার পূর্ব মুহূর্তে তিনি এই লিপি ওসমানকেই ভয় পেতেন খুব। এমনকি কএকদিন মহিলা কলেজে লিপি ওসমানকে তেড়ে আসতে দেখে ভয় পেয়ে পালিয়েছিলেনও নারায়ণগঞ্জের ‘সিংহ পুরুষ’ শামীম ওসমান! ভাবছেন বানিয়ে বানিয়ে বলা? একদমই নয়। খোদ শামীম ওসমান নিজেই এ কথা বলেছিলেন একটি অনুষ্ঠানে।

২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন বাংলার ‘সেন্স অব হিউমার’ শিরোনামের শাহরিয়ার নাজিম জয়ের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে আড্ডার ফাঁকে প্রেমের পর্ব নিয়ে যখন কথা হচ্ছিলো তখন শামীম ওসমান নিজের মুখেই বলেছিলেন তিনি কেন সেদিন দৌড়ে পালিয়েছিলেন!

ওই অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান জানিয়েছিলেন, সেসময় লিপি ওসমান নারায়ণগঞ্জ কলেজের ছাত্রী ছিলেন। তাঁকে যখন তাঁর ভালো লাগে। তাঁর প্রেমে যখন পড়েছিলেন তখন কিছুতেই তিনি কনভেন্স হচ্ছিলেন না। দুই বছর ধরেও চেষ্টা করে লিপিকে কনভেন্স করতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন তিনি। এ কারণে খুব হতাশও ছিলেন শামীম ওসমান। এমন অবস্থায় লিপিকে বশ করতে তাঁর বন্ধুরা এক ফকির বাবার কাছ থেকেও গোলম*রিচ পুড়িয়ে এনেছিলেন। যা প্রতিদিন ভোর ফজরের ওয়াক্তের আগে এগুলো পোড়াতে হবে। তিনি সেও করেছিলেন।

তিনি আরও বলেছিলেন, এমন করে আরও দুই তিন মাস গেলেও কোনো কাজ হচ্ছিলো না। এমন সময় ছাত্র আন্দোলন হচ্ছিলো। এসময় তিনি মহিলা কলেজে গেলেন স্ট্রাইক করতে। গেট খুলে যখন তিনি কলেজের ভেতর ঢুকবেন তখন তাঁর চোখ নিবন্ধিত হলো কলেজ মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা লিপির দিকে। তখন লিপির সাথে তাঁর দুই বান্ধবীও ছিলেন। এরমধ্যে তাঁরা তিনজন শামীম ওসমানের দিকে দৌড়ে আসছিলেন। তাঁদেরকে দৌড়ে আসতে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন শামীম ওসমান। তিনিও ভয়ে দৌড়ে পালালেন কলেজের প্রিন্সিপালের অফিসের দিকে।

তবে শামীম ওসমান বলছিলেন, পরে তিনি জানতে পারেন তাঁরা আসলে তাঁকে দেখে দৌড়ে আসেনি। তাঁরা মূলত গেট খোলা পেয়ে কলেজ পালানোর জন্য দৌড়ে গেট পার হওয়ার জন্য দৌড়েছিলেন। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, ফকিবার বাবার সেই গোল ম*রিচ পুড়িয়েও লিপি ওসমানের ভেতর কোনো জ¦ালতন তৈরি করতে পারেননি শামীম ওসমান। আর এটা ভাবতেই হেসে ওঠেন সঞ্চালক অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়ের সাথে।

শুধু কি তাই? শামীম ওসমান যে কোমল মনে মানুষ এবং তাঁর ভেতরেও যে একটা বাচ্চা মানুষ লুকিয়ে আছে সেটিও এই অনুষ্ঠানে বের করে নিয়ে এসেছিলেন শাহরিয়ার নাজিম জয়। এদিন তিনি জয়ের সাথে অনুষ্ঠান মঞ্চেও নেচেছিলেন। যা ছিলো অনেকের কাছেই বিষ্ময়ের। ভূত দেখার মতো। অনেকেই সেদিন বলেছিলেন, শামীম ওসমান সত্যি সত্যিই নাচছেন! কারো কাছেই যেন সেই দৃশ্যটি বিশ^াস হচ্ছিলো না।