তাহলে শুরুতেই এ বক্তব্য দিয়েই সংসদ উত্তপ্ত করলো বিএনপির এ দুই সাংসদ!

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ ও রুমিন ফারহানার বক্তব্যে উত্তাপ ছড়ালো সংসদে। হারুন তার বক্তব্যে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখতে পাওয়ার সিদ্ধান্ত দেরিতে আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এই অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করে এটা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করেন। তার এ বক্তব্যে সরকারিদল আওয়ামী লীগের সদস্যরা আপত্তি জানান এবং প্রতিবাদ করেন।

বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য রুমিন ফারহানার বক্তব্য কেন্দ্র করেও অনুরূপ পরিস্থিতি তৈরি হয়। তিনি বক্তব্যের শুরুতেই এই একাদশ জাতীয় সংসদকে অবৈধ সংসদ বলে আখ্যায়িত করেন। তার এই বক্তব্যেরও আপত্তি জানান আওয়ামী লীগের সদস্যরা।

মঙ্গলবার একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের শুরুর দিন মাগরিবের নামাজের বিরতির পর পয়েন্ট অব অর্ডারের বক্তব্য শুরু হয়। এক পর্যায়ে বিএনপির সদস্য হারুনুর রশিদ ফ্লোর পান।

এসময় তিনি দেরিতে চাঁদ দেখার ঘোষণার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, চাঁদ দেখে রোজা রাখা চাঁদ দেখে ঈদ করা- ইসলামের এই বিধান লঙ্ঘন করার এখতিয়ার কারো নেই। চাঁদ দেখা যাবে ৬টা ৭টার মধ্যে। কিন্তু রাত ৯টায় ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন চাঁদ দেখা যায়নি। আবার রাত ১১টায় ঘোষণা দিলেন চাঁদ দেখা গেছে। এটা করার এখতিয়ার কারো নেই।

‘সংবিধানে আছে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম। আবার বলা হয় ধর্ম যার যার উৎসব সবার। পূজায় গিয়ে এটা বলা হয়, এটা হতে পারে না। এটা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেহেতু রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তাই এটা হতে পারে। আর এটা বলতে হলে তবে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দিতে হবে।’

এসময় আওয়ামী লীগের সদস্যদের আপত্তি-চেঁচামেচির মধ্যেও হারুন তার বক্তব্য চালিয়ে যেতে থাকেন। স্পিকার বারবার তাকে বক্তব্য শেষ করার আহ্বান জানান।

এরপর জাতীয় পার্টির সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, বিএনপির সদস্য সংবিধান পরিবর্তনের কথা বলেছেন, সংবিধান নিয়ে আলোচনা করতে হলে অন্যদিন সময় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে চাঁদ দেখা নিয়ে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি অন্যায় করেননি।

এরপর বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহামন। তিনি বলেন, ওনার বক্তব্যের সময় মনে হচ্ছিল আমি ওয়াজ মাহফিলে আছি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমান মদের লাইসেন্স দিয়েছিলেন। এটা কতটুকু ইসলাম সম্মত।

এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, আমি এমন একটি সংসদের দাঁড়িয়ে কথা বলছি যে সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত না। আমি খুশি হবো এই সংসদের মেয়াদ আর একদিনও না বাড়লে।

এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাতে থাকেন আওয়ামী লীগের সদস্যরা। সংসদে হৈচৈ চেঁচামেচি শুরু হয়। এসময় স্পিকার সংসদ সদস্যদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান বারবার। এক পর্যায়ে স্পিকার বিএনপির ওই সদস্যের উদ্দেশ্যে বারবার বলতে থাকেন আপনি বসুন আপনার সময় শেষ হয়েছে।

পরে এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, এই সংসদকে অবৈধ বলা হয়েছে। তিনি শপথ নিয়েছেন আবার সংসদকে অবৈধ বলছেন। তিনি ১৬ কোটি মানুষকে কটাক্ষ করেছেন, সংবিধানকে অবমানা করেছেন। তার এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হোক। তখন স্পিকার বলেন, এই শব্দগুলো এক্সপাঞ্জ করা হলো।