সৌদি থেকে লাশ হয়ে ফিরলেন প্রবাসী জুয়েল

অভাব-অনটনের সংসার। নিজের জমাজমি নেই। অন্যের কাজ করে সংসার চালাতেন। স্ত্রী ও দুই কন্যা নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতেন। ধারদেনা করে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে মাস দুয়েক আগে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আবর। সেখানে গিয়ে কাজ করে টাকা উপার্জন করে ঋণ পরিশোধ করবেন। দুই কন্যা সন্তানকে পড়ালেখা করাবেন। সংসারে সচ্ছলতা আনবেন।
সুখে-শান্তিতে দিন কাটাবেন এমন স্বপ্ন নিয়ে সুখের আশায় গত ২৭শ মার্চ সৌদি আরব যান কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বাহাদিয়া গ্রামের জুয়েল। সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে আল হাবিব কোম্পানির অধীনে থাকতেন।

এক মাসের মতো কাজ ছাড়া থাকার পর ১লা মে প্রথম কাজের জন্য বের হন। কিন্তু বিধিবাম। দাম্মাম থেকে মদিনা যাওয়ার পথে সাকরা নামক স্থানে ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান জুয়েল। জুয়েলের মৃত্যুর সাথে সাথে মারা যায় শত স্বপ্ন, শত আশা। পরদিন খবর পৌঁছে তার গ্রামের বাড়িতে। শোক বিহ্বল হয়ে পড়ে জুয়েলের পরিবার। নুসরাত জাহান জ্যোতি (৯) ও ইসরাত জাহান ইভা (৫) নামে দুই কন্যাসন্তান নিয়ে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে জুয়েলের স্ত্রী নাজমা বেগম। জুয়েলের বাবা গিয়াস উদ্দিন, মা আমেনা খাতুন ও বোন মিনারা খাতুনসহ পরিবার, আত্মীয়-স্বজনরাও শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

নিহতের এক মাস পর গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে একটি এয়ার এম্বুলেন্সে জুয়েলের লাশ ঢাকায় এসে পৌঁছায়। শুক্রবার ভোরে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নেয়া হলে সেখানে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে চারপাশ। শোকাহত পরিবারকে সহমর্মিতা ও সমবেদনা জানান আশপাশের লোকজন। শুক্রবার জুমা নামাজের পর জানাজা নামাজ শেষে দাফন করা হয় জুয়েলের লাশ। জুয়েল উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের বাহাদিয়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে।

জুয়েলের স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, ‘অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটিয়েছি, পরিবারের জন্য দুমুঠো ভাতের জোগান দিতে বিদেশ গিয়েছিল, ভাতের জোগানের বদলে লাশ হয়ে ফিরল। বাপের বাড়ি থেকে ধারদেনা করে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে স্বামীকে সৌদি আরব পাঠিয়েছিলাম। অভাবের সংসার, স্বামীর ঋণের বোঝা এখন মাথায়, সব কিছু মিলিয়ে এখন আমার এতিম দুই কন্যা সন্তানের কী হবে?