ঢাকার বাইরে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হওয়ার পর ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর দাবি করেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল তাকে।এছাড়া তাদের সঙ্গে রাজনীতি করলে এবং কথার বাইরে না গেলে ‘বাড়ি-গাড়ি’ দেওয়ারও প্রস্তাব করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তিনি।
তবে তার এই বক্তব্য নাকচ করে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী বলেছেন, ‘অবান্তর ও হাস্যকর’ কথা বলেছেন নূর। তিনি এখন ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ’।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নূর। তিন দশক পর গত মার্চে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ওই পরিষদ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভিপি নির্বাচিত তিনি।
নূর ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় ছাত্রলীগ প্রথমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখালেও পরে তার সঙ্গে হাত মেলায়। নবনির্বাচিত ভিপি হিসেবে নূরও গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মাঝে হারানো মাকে খুঁজে পেয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ডাকসুর ভিপির দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্যাম্পাসে একবার ছাত্রলীগের ‘ডিম নিক্ষেপের’ শিকার হওয়ার নূর গত শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে বাধা দেয় ছাত্রলীগ। পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইফতার সেরে ঢাকার পথ ধরেন তিনি। পরদিন বগুড়ায় তার ইফতার অনুষ্ঠানে হামলা করে ছাত্রলীগ।
ওই হামলায় আহত নূর এখনও ঢাকার মগবাজারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।মঙ্গলবার তার ফেইসবুক পেইজে একটি পোস্ট দিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, ছাত্রলীগের ‘পদ নিতে না চাওয়ায়ই’ এখন নূরের ওপর হামলা হচ্ছে কি না।
পোস্টে লেখা হয়, “বাড়ি-গাড়ির অফার, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১ নম্বর সহ-সভাপতি, ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের অফার ফিরিয়ে দেওয়াতেই কি ছাত্রলীগ দিয়ে নূরের উপর ধারাবাহিকভাবে এই হামলা, মামলার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে! তবে স্পষ্টভাবে জেনে রাখুন, নূর কোনো অপশক্তির সাথে আপোষ করবে না।”
এই পোস্টের সত্যতা যাচাইয়ে নূরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার আগে আমাকে বলা হয়েছিল যে, ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ নিতে চাইলে সেক্ষেত্রে ১ নম্বর সহ-সভাপতি বা ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হবে। কিন্তু আমি তো সেটা গ্রহণ করিনি। কারণ ছাত্রলীগে ফেরার ইচ্ছা আমার নেই।”
তিনি বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে আমার কাছে অফার আসছে, এর জন্য টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি যা লাগবে তারা দেখবে, তাদের সাথে রাজনীতি করলে বা তাদের কথার বাইরে না গেলে।”
ডাকসু নির্বাচনের আগেও তাকে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে জিএস পদে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন নূর।ছাত্রলীগের উচ্চ পযার্য় ছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে এই প্রস্তাব এসেছিল বলে দাবি তার।
নূর এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। গত ১৬ মার্চ গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে বক্তব্যে খুব জোরের সঙ্গে ওই পরিচয় তুলে ধরেছিলেন তিনি।
সেদিন নূর বলেছিলেন, “আমি ছাত্রলীগের স্কুল কমিটিতে দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে থাকা অবস্থায় উপ-মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদে ছিলাম। অথচ কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে, বিনয়ের সঙ্গে বলব যে, আমার ছাত্রলীগের ভাই-বন্ধুরাও কেন যেন আমাকে জামাত-শিবির বানানোর জন্য অপপ্রচার তুলেছিল। আমার পুরো পরিবার ছিল আওয়ামী লীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের।”
নূরকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, তার এই দাবি ‘অবান্তর’ ও ‘হাস্যকার’। “তাকে কোন দুঃখে বা কোন সুখে ছাত্রলীগের পদ দেওয়া হবে?” নূরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ‘অসুস্থ’ বলেন ডাকসুরও জিএস রাব্বানী।
নূর ‘ইমোশন’ দিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, “কেউ একটা কথা বললে তার পক্ষে তো এভিডেন্স তাকেই দিতে হবে। একটা কথা মন চাইল বলে দিলাম, তার এ ধরনের কথার কি কোনো এভিডেন্স আছে?”
সময়ের কন্ঠস্বর