মালয়েশিয়ায় নির্জাতিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য মামলা করবে দেশটির সরকার

মালয়েশিয়ার চিকিৎসা সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ডব্লিউআরপি’র বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে দেশটির সরকার। বাংলাদেশি ও নেপালি শ্রমিকদের সঙ্গে বাজে আচরণ, তিন মাস ধরে তাদের বেতন না দেওয়াসহ সরকারি তদন্তে ৪২টি অভিযোগের আলামত পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দেশটির সরকার মামলা দায়ের করতে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ার মানব সম্পদবিষয়ক মন্ত্রী এম. কুলাসেগারানকে উদ্ধৃত করে মালয় মেইল খবরটি জানিয়েছে। কুলাসেগারান দাবি করেন, গত বছরের আগস্ট থেকে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে মালয়েশীয় সরকার।

মালয়েশিয়াভিত্তিক ডব্লিউআরপি একটি রাবার গ্লাভস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। কুয়ালালামপুরের কাছেই এর সদর দফতর অবস্থিত। গত ডিসেম্বরে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, ডব্লিউআরপি নামক প্রতিষ্ঠানের কারখানায় কাজ করা বাংলাদেশি শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক ওভারটাইম করানোর পাশাপাশি জোরপূর্বক শ্রমদানে বাধ্য করাহচ্ছে। গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই শ্রমিকেরা অভিযোগ করেন,বেতন বকেয়া রাখা,ঋণের জালে আটকানো ও পাসপোর্ট জব্দ করে রাখার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। গার্ডিয়ান আন্তর্জাতিক শ্রম সংঘের নীতিকে বিবেচনায় নিয়ে একে ‌‘আধুনিক শ্রমদাসত্ব’র পরিস্থিতি আখ্যা দেয়।তবে সেসময় ডব্লিউআরপি কর্তৃপক্ষ সে অভিযোগ নাকচ করে দেয়।

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদবিষয়ক মন্ত্রী এম. কুলাসেগারান বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) কামপুং তাই লী গ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। সেসময় সাংবাদিকদের তিনি জানান, ডব্লিউআরপি’র বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তিনি জানান, অভিযোগগুলোর মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশি ও নেপালি শ্রমিকদের জন্য যথাযথ জীবনমান নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়া। এ অভিযোগ তুলে কয়েকদিন আগেও ধর্মঘট পালন করেছেন দুই হাজার কর্মী।

গত বছরের আগস্ট থেকে তদন্ত চলছে জানিয়ে কুলাসেগারান জানান, তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে ৪২ টি অভিযোগের আলামত পাওয়া গেছে। নিশ্চিত হওয়া গেছে যে কোম্পানিটি শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছে। শ্রম আইনের কোন ধারার আওতায় মালয়েশীয় সরকার মামলাটি দায়ের করবে সে ব্যাপারে কিছু জানাননি কুলাসেগারান।

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদবিষয়ক মন্ত্রী জানান, শ্রমিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণকারী কোম্পানিগুলোর তালিকায় শুধু ডব্লিউআরপি’ই নেই। সরকারের তালিকায় এরকম আরও দশটি কোম্পানি আছে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়ায় এসব কোম্পানির নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

মালয়েশিয়ার শ্রমিকদের মতো করেই বিদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে আচরণ করার জন্য প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন কুলাসেগারান। বলেন, ‘স্থানীয় শ্রমিকরাতো কোনও অভিযোগ করেন না। কারণ কোম্পানিগুলো জানে যে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে তারা শ্রম দফতরে চলে যাবে। বিদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে এটা কেন? এটা ঠিক নয়।’

গার্ডিয়ানের কাছে প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকরা অভিযোগ করেছিল, তাদের কারখানার ভেতরে আটকে রাখা হয়। কেবল রবিবার তারা বাইরে যাওয়ার সুযোগ পায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেপালি শ্রমিক বলেছিলেন, ‘তিন মাস হয়ে গেছে আমাদের বেতন দেওয়া হয়নি; পরিস্থিতিটা খুব ভয়াবহ। আমার পরিবারের অর্থের প্রয়োজন কিন্তু আমি তাদের কাছে অর্থ পাঠাতে পারছি না। আমার কারখানা কোথায় তারা জানতে চাইছে।’

এক সম্ভাব্য ক্রেতা ডব্লিউআরপির কারখানা ঘুরে আসার পর বলেছেন, কারখানার ভেতরে প্রবেশের পর সেখানকার পরিবেশ দেখে তিনি খুবই মর্মাহত হয়েছেন। এত বাজে কর্মপরিবেশ তিনি কোথাও দেখেননি। আবার এক হাজার ৮০০ শ্রমিক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন হোস্টেলে রাখা হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি শ্রমিককে।