প্রবাসীকে বেঁধে রাখা হল বিমানের ভেতর

লন্ডন থেকে সিলেটগামী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে মাতলামিসহ অসংলগ্ন আচরণের অভিযোগে ইংল্যান্ড প্রবাসী এক বাংলাদেশি যাত্রীকে দড়ি দিয়ে সিটের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল। গত ৩০ ডিসেম্বর এ ঘটনা ঘটে। প্রবাসী ওই সিলেটির নাম জিয়া (৪০)। দীর্ঘ দশ ঘণ্টার যাত্রা শেষে উড়োজাহাজটি সিলেট পৌঁছলে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় ওই যাত্রীকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যে ওই বেঁধে রাখার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ ঘটনার বিষয়ে বলেন, এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও বিমান ক্রুরা খুবই ধৈর্যের সঙ্গে সুকৌশলে ওই যাত্রীর মাতলামি সামাল দিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য একটা বিব্রতকর ঘটনা। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিমানের কেবিন ক্রু ও পাইলটদের আচরণে ওই যাত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।

তাদের অভিযোগ, ফ্লাইটে থাকা বিমানের এক শীর্ষ কর্মকর্তার ভাই ‘ক্যাপ্টেনে’র আচরণেই ওই যাত্রী একপর্যায়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠেন। যা পরে অন্যদিকে মোড় নেয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ওই ফ্লাইটের যাত্রী ও ক্রদের কাছ থেকে জানা গেছে, ৩০ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেটের ফ্লাইটে (বিজি-০০২) উঠেই মাতলামি শুরু করেন ওই যাত্রী। ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী হয়েও জিয়া জোর করে বিজনেস ক্লাসে বসেন এবং কেবিন ক্রুদের কাছ থেকে উন্নত মানের হার্ড ড্রিংস চান।

কেবিন ক্রু তাকে ওই ব্র্যান্ড নেই জানানোর পরপরই তিনি উচ্চবাচ্য শুরু করেন। একপর্যায়ে বিজনেস ক্লাস ছেড়ে ইকোনমি ক্লাসের আসনে বসতে বাধ্য করা হয়। এরপরই তিনি শুরু করেন অস্বাভাবিক আচরণ। ক্রু ছাড়াও পাশের দু’জন যাত্রীর সঙ্গেও তার বচসা হয়।

একপর্যায়ে জিয়া পাশের এক যাত্রীকে ঘুষি মারেন এবং জামা ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় ক্যাপ্টেন মাকসুদ ককপিট থেকে ছুটে এসে জিয়াকে পুলিশে দেয়ার ভয় দেখান। এতেও না দমায় ক্যাপ্টেন তাকে জার্মানিতে ফ্লাইট ল্যান্ড করে পুলিশে দেয়ারও হুমকি দেন।

এরপর জিয়া কিছুটা শান্ত হন। কিন্তু আধা ঘণ্টা পরই জিয়া আবার নিজের সিট ছেড়ে সবাইকে গালিগালাজ করতে থাকেন। তখন দু’জন ক্রুসহ অন্যরা ছুটে এসে সামলানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে জিয়াকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন।

এদিকে ঘটনার দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেছেন ফ্লাইটের যাত্রীদের অনেকেই। শুক্রবার সকালে প্রথম একটি ভিডিও আপলোড করা হয় ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে দেখা যায়, যাত্রী জিয়া বারবার সিট থেকে উঠে দৌড় দেয়ার চেষ্টা করেন। পাশের আসনের যাত্রীসহ কেবিন ক্রুরা শান্ত করতে ব্যর্থ হন। তাকে জাপটে ধরে সিটে বসিয়ে রাখতে গিয়ে গলদঘর্ম হয়ে পড়েন তিনজন ক্রু। এক পর্যায়ে দড়ি এনে তাকে জোর করে বাঁধতে গিয়ে পড়ে যান দু’জন কেবিন ক্রু। তাকে ঘাড় ধরে সিটে বসিয়ে রাখার চেষ্টা করার সময় তিনি মাথা দিয়ে এক ক্রুর পেটে গুঁতো মারেন। এ সময় অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন।

এ বিষয়ে বিমানের কেবিন ক্রু আফসান শাহীন যুগান্তরকে বলেন, ওই যাত্রীর জন্য ফ্লাইটের ২৮০ জন যাত্রীর সবার ঘুম হারাম হয়ে পড়েছিল। সিলেট নামার আগ পর্যন্ত সব ক্রু তাকে সামলাতে পেরেসানিতে ছিল। তার কারণে বিঘ্নিত হয়েছে সব যাত্রীর সাধারণ সেবা। তিনি বলেন, সিলেটে নামার পর ডাকা হয় বিমানসহ বিমানবন্দরের বিভিন্ন ইউনিটের নিরাপত্তাকর্মীদের। তাদের সবার উপস্থিতিতে জিয়াকে বিমানের নিরাপত্তাকর্মীর কাছে তুলে দেন জুনিয়র পার্সার হাফিজ।

এদিকে জিয়াকে দড়ি দিয়ে বাধার দৃশ্য ভাইরাল হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একজন লিখেছেন, বিমানের ভেতর একজন যাত্রীকে জোরপূর্বক কোরবানির গরুর মতো দড়ি দিয়ে বেঁধে সিটের নিচে শুইয়ে রাখার দৃশ্য চরম অমানবিক। এটা কিছুতেই মেনে নেয়ার মতো নয়। তাকে হাতকড়া লাগিয়ে সরাসরি পুলিশে দিতে পারত বিমান। আরেকজন লিখেছেন, আজকের এই ডিজিটাল বাংলাদেশে সেই মান্ধাতার আমলের মতো দড়ি থেরাপি দেয়াটা সহ্য করার মতো নয়।

এ বিষয়ে বিমান এমডি মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, বিমানে এখনও হ্যান্ডকাফ ব্যবহারের প্রচলন হয়নি। বাধ্য হয়ে আগের মতো দড়ি দিয়েই ওই উচ্ছৃঙ্খল যাত্রীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।