সৌদিতে মৃত প্রবাসীর পরিবারকে অর্থ সহায়তা ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ করার দাবি

সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশি পেশাজীবীদের সঙ্গে জাতীয় উন্নয়নে বিনিয়োগ, জনসেবা ও সংযুক্তি নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল।

রিয়াদের ম্যারিয়ট হোটেলে স্থানীয় ব্যবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার প্রবাসীরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আবদুল মালেক। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম মূল আলোচক ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন দূতাবাসের উপ-মিশন প্রধান ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ আলোচক হিসেবে প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আইনি জটিলতা মোকাবেলা করে অর্থের অভাবে প্রবাসীদের মরদেহ যথাসময়ে পাঠানো সম্ভব হয় না।

অথচ দেশে মৃতের শোকাহত পরিবার তার আপনজনকে শেষবারের মতো একবার দেখার প্রত্যাশায় দিন যাপন করেন।

তিনি আরও বলেন, মৃত প্রবাসীর পরিবারকে ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ তহবিল থেকে যে তিন লাখ টাকা দেয়া হয়ে থাকে, তার পরিমাণ দশ লাখ টাকায় উন্নীত করা দরকার। তিনি প্রবাসীদের জন্য জীবন বীমা এবং পেনশনের ব্যবস্থা করার দাবি সমর্থন করে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার ড. আবুল হাসান প্রবাসী বাংলাদেশিদের অভিজ্ঞতা, মেধা, বিনিয়োগ ও জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে জানান।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে আলোচনায় যোগ দিয়ে কর্মশালার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সংযুক্ত থেকে প্রবাসীদের দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার আহ্বানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মূখার্জী, এসডিএস অ্যাফেয়ার্সের প্রধান কোর্ডিনেটর আবুল কালাম আজাদের ভিডিও বার্তা প্রদর্শন করা হয়।

আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে দ্রুত অগ্রসরমান এক দেশ। প্রায় আট শতাংশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এসেছে।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা দেশের উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখছে। পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, প্রবাসীদের দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার জন্য সরকার বিনিয়োগ, জনসেবা ও বিশেষজ্ঞ সংযুক্তি নামে তিনটি ক্ষেত্র নির্ধারণ করেছে।

অনুষ্ঠানে মিশন উপ-প্রধান ড. নজরুল ইসলাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে প্রবাসীদের সব ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান রাখেন।

অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. কাজী আনোয়ারুল হক, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মনিরুছ সালেহীন ও বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তী, এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজার অনির চৌধুরী অনিবাসীদের জাতীয় উন্নয়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে অংশগ্রহণের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের দীর্ঘমেয়াদি লোন সুবিধার বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করেন।

উপস্থিত বাংলাদেশি অনিবাসীরা ন্যাশনাল আইডি কার্ড প্রদান ও প্রবাসী কল্যাণ কার্র্ডের ফি কমানোর দাবি জানান। ঝামেলা ভোগান্তিমুক্ত বিনিয়োগ, হয়রানি বন্ধে ওয়ানস্টপ সার্ভিস, সরকার পরিবর্তনে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান, বাড়ি নির্মাণ কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে হয়রানি বন্ধ, ব্যাংক থেকে ক্রয়কৃত বন্ডকে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্যের দাবি করেন।

অনিবাসীদের পক্ষ থেকে কর্মশালায় বিভিন্ন প্রশ্ন করেন- ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন, মোহাম্মদ আলি নুর, এম আর মাহবুব, ডাক্তার মতিন, মমিন, ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান খান, শেখ শিপন, সালাহ উদ্দীন, জাহাঙ্গির আলম প্রমুখ। এর আগের দিন জেদ্দায় হলিডে ইন হোটেলে একই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।