সবার আগে শিক্ষা স্বাস্থ্যে নজর দেবেন নূর মোহাম্মদ

পুলিশ বাহিনীর সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ। দুই যুগেরও বেশি সময় চাকরি করেছেন। ৪ বছর ছিলেন আইজিপি। দায়িত্ব পালন করেন সচিব এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবেও। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে হয়েছেন সংসদ সদস্য। তাকে মন্ত্রী করা হতে পারে বলেও আলোচনা আছে।

গতকাল বিকালে আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাপকালে নূর মোহাম্মদ জানান, পুলিশের চাকরিতে সেবামূলক কাজের ক্ষেত্র তুলনামূলক সংকীর্ণ। তবে সংসদ সদস্য হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্র বিস্তৃত। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করতে চান। সবার আগে নজর দেবেন তার এলাকার মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্যের দিকে। এর পর অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে মাদক নির্মূলের কাজ।

নূর মোহাম্মদ বলেন, অনেকের ক্ষেত্রে দেখেছি, অনেক কিছু থাকার পরও লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না। এ জন্য কর্ম, ভাগ্য, মানুষের দোয়া এসব বিষয় আছে। আমি পুরোপুরি একটা ডিসিপ্লিন জায়গা থেকে এসেছি। আগে যে জায়গাটা ছিল, তা থেকে এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে সবার কাজ কিন্তু জনগণের সেবা। সবাই কিন্তু জনগণের সেবার কাজেই নিয়োজিত কিংবা নির্বাচিত। আমরা আগে যে সেবাটা দিয়েছি, সেটা সংকীর্ণ। যেমন-আমি যখন পুলিশে ছিলাম-পুলিশের সেবাটা দিয়েছি, যখন দেশের বাইরে ছিলাম, তখন শুধু দেশের বাইরের জন্য যে কাজ তা করেছি।

কিন্তু এখানে সংসদ সদস্য হিসেবে কাজের বিস্তৃতি অনেক বেশি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এমন কিছু বিষয় নেই যা করা যায় না। জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে সুযোগ না দিতেন, তা হলে আমি সংসদ সদস্য হতে পারতাম না। তাই শপথগ্রহণের পর আমি নেত্রীকে বলেছি, আপনি আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন চেষ্টা করব তার সদ্ব্যবহার করার। আমার দায়িত্বে যেন ব্যত্যয় না ঘটে, সেদিকে লক্ষ্য রাখব।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে যারা শপথ নেন তাদের শপথে কিন্তু এ কথাগুলোই লেখা থাকে যে, আমি আমার কাজগুলো যথাযথভাবে করার চেষ্টা করব, ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করব, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করার চেষ্টা করব। আমাদের মতো দেশে পুলিশ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, সমালোচনা হয়। এখানে যদি পুলিশ এবং রাজনীতিবিদরা মিলে কাজ করে, তা হলে কাজটা হবে। প্রত্যাশিত সেবাটা জনগণ পাবে।

আপনার এলাকার মানুষের জন্য কিছু করার পরিকল্পনা আছে কিনা এ প্রশ্নে নূর মোহাম্মদ বলেন, প্রত্যাশা হচ্ছে আশা, এর পর শুরু হয় জার্নি। জনগণ তার প্রত্যাশার জায়গা থেকেই তার পছন্দের মানুষকে ভোট দেয়। অনেকে তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারে না। আমি আমার এলাকার প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

উন্নয়ন তো কেবল রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করলেই হয় না, এখানে মানবিকতা, নৈতিকতা, শিক্ষা, ছেলেমেয়েরা কীভাবে আছে, তাদের খেলাধুলা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, এগুলোও দেখা জনপ্রতিনিধিদের কাজ। আমি ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র সবাইকে নিয়ে এলাকার সমস্যা চিহ্নিত করে কাজ করার চেষ্টা করব। আর আমি কখনো কোনোরকম পুলিশি প্রটেকশন নিয়ে চলব না। পুলিশ স্বতন্ত্রভাবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে তারা তাদের কাজ করবে।

কেন পুলিশ প্রটেকশন নেবেন না, এ প্রশ্নে সাবেক আইজিপি বলেন, পুলিশ প্রটেকশন নিয়ে অনেক জনপ্রতিনিধি চলেন। পুলিশের সাইরেন বাজিয়ে চলাফেরাকে মানুষ ভালোভাবে দেখেন না। জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর তিনি আর তার মধ্যে থাকেন না। তিনি জনগণের সম্পদে পরিণত হন। যখন পুলিশ নিয়ে চলব তখন মানুষ বলবে আমি বিচ্ছিন্ন মানুষ। মানুষ বলবে আমাদের ভোট নিয়ে নির্বাচিত হয়ে আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করছেন। বিদেশের অনেক রাষ্ট্রেই কিন্তু এমনটা নেই। আমরা এখানে যেভাবে পুলিশকে ব্যবহার করে চলি, এতে আমার খারাপ লাগে। একজন জনপ্রতিনিধি কেন পুলিশের প্রটেকশন নিয়ে চলবে? এ জন্য আমি মনে করি, আমি এই কাজটা কখনো করব না।

মন্ত্রী হওয়ার কোনো আকাক্সক্ষা আছে কিনা? জবাবে তিনি বলেন, আমার এমন কোনো আশা নেই, প্রত্যাশা নেই, ইচ্ছাও নেই। আমি মনে করি, জীবনে অনেক পেয়েছি। প্রাপ্তির হিসেবে যদি দেখি, তা হলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আমার মা-বাবা, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের দোয়ায় গ্রাম থেকে এসে জীবনে এ জায়গায় এসেছি। এর পর আর কী চাওয়ার থাকতে পারে? এই একটা সুযোগ পেয়েছি, সেটাকে কাজে লাগাতে চাই। আমি জাতীয়ভাবে দেখতে চাই না। আমি আমার নির্বাচিত এলাকা কটিয়াদি, পাকুন্দিয়া নিয়ে কাজ করতে চাই। এলাকায় মানবিক উন্নয়ন, নৈতিক উন্নয়ন এসব কাজ করতে গিয়ে আমি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে আগে গুরুত্ব দেব। এটা করতে পারলেই মাদক সমস্যার মতো সমস্যাও সমাধান হয়ে যাবে। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে।

অনেক এলাকায় মাদকের সঙ্গে এলাকার নেতাকর্মীরাও সম্পৃক্ত, আপনার এলাকায় এ রকম থাকলে কী ব্যবস্থা নেবেন? এ প্রশ্নে নূর মোহাম্মদ বলেন, যা বলেছেন, তা হয়। সব জায়গায় ভালোর পাশাপাশি মন্দ লোক থাকব। এখানেই তো সদিচ্ছার ব্যাপার। সবাই মিলে দাঁড়ালেই তো একটা পথ আসবে। তারা মনে করবে, খারাপ কাজ করলে এ প্রতিবাদ আসবে।