সন্তানদের বেঁধে রেখে সুবর্ণচরে দলবেঁধে ধর্ষণ: ডাক্তারি পরীক্ষায় যা মিললো

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামী সন্তানদের বেঁধে রেখে গৃহবধূকে ধর্ষণের প্রাথমিক আলামত মিলেছে ডাক্তারি পরীক্ষায়। বৃহস্পতিবার দুপুর দুপুরে এই তথ্য জানান নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক মোহাম্মদ খলিল উল্যা।

তিনি বলেন, নির্যাতিতার শরীর থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। পরে তা আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সৈয়দ মুহিউদ্দিন আব্দুল আজিম জানান, চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করে এসপি অফিসে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে আদালতে যাবে।

রবিবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পর রাত ১২টার দিকে ঘরে ঢুকে ওই গৃহবধূকে দল বেঁধে ধর্ষণ করা হয়। এ সময় তার স্বামীকে মারধর ও চার সন্তানকে বেঁধে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। পরে ভুক্তভোগী নারীর স্বামী নয় জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান, বুধবার রাতে পুলিশের দুটি দল জেলার সদর উপজেলার উত্তর ওয়াপদার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আসামি রুহুল আমিন এবং সেনবাগ উপজেলার খাজুরিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেচুকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত রুহুল আমিন মেম্বার সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এবং বেচু ব্যাগা গ্রামের আবু কাশেমের ছেলে।

এর আগে বুধবার কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার মহেশপুর এলাকা থেকে প্রধান আসামি সোহেলকে গ্রেপ্তার করে নোয়াখালী ডিবি পুলিশ। তার আগে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার আজাদ নগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আসামি স্বপন। মামলার অন্য আসামি বাদশা আলম প্রকাশ বাসুকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকি চার আসামি এখনো পলাতক।

তারা হলেন- হানিফ, চৌধুরী, মোশাররফ ও সালাহউদ্দিন। ঘটনাটি প্রকাশ হলে ভুক্তভোগীর স্বামী জানান, ধানের শীষে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে। তবে তিনি পরে করা মামলায় বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর নিন্দার ঝড় ওঠে। নোয়াখালীর পুলিশ সুপার ইলিয়াস শরীফ বলেছেন, তারা সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করবেন। তার দাবি, ঘটনাটি রাজনৈতিক নয়। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক জানিয়েছেন, এই ঘটনাটির তদন্ত করবেন তারা। এরই মধ্যে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন সংস্থা ঘটনাটির দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছে।

বুধবার দুপুরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তিন সদস্যের একটি দল নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে। কমিশনের সদস্যরা হচ্ছেন আল মাহমুদ ফাইজুল কবির, গাজী সালাহ উদ্দিন ও স্ইুজমিতা পাইক। এ সময় মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রের তিন সদস্যের একটি তদন্ত দলও হাসপাতাল ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তারা হচ্ছেন সেলিনা আক্তার, নার্গিস আক্তার ও হাসিবুর রহমান।

তদন্ত দলের প্রধান আল-মাহমুদ ফয়জুল কবীর বলেন, ‘খবর পেয়ে খতিয়ে দেখার জন্য এসেছি। আমরা ওই নারী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। মেডিকেল প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেওয়া হবে।’ ভুক্তভোগী নারীকে আইনি সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানিয়ে কমিশনের প্রতিনিধি বলেন, ‘যে কোনো অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় মানবাধিকার কমিশন ভুক্তভোগীর পাশে থাকবে।’