ব্রেকিং! অতি শিগগিরই নতুন পদ্ধতিতে কর্মী নিবে মালয়েশিয়া

সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতিতে শিগগিরই কর্মী যাবেন মালয়েশিয়ায়। চলতি মাসেই এ পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারে দেশটি, যা স্বল্প ব্যয়ে অভিবাসনের সুযোগ উন্মোচন করবে। সেক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের কোনো দুর্নীতি বা অনিয়মের সুযোগ থাকবে না।

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের একাধিক বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্তে এসেছে মালয়েশিয়া।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই ‘নতুন অনলাইন পদ্ধতি’তে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর আভাস দিয়েছে মালয়েশিয়া। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের কর্মকর্তারা এবার অল্প অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী নিয়োগের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

এছাড়া সব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো নিশ্চিত করা, এজেন্সিগুলোর মানসম্পন্ন ট্রেনিং সেন্টার থাকা ছাড়াও শ্রমিক সংক্রান্ত অন্য বিষয়গুলো নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত করেছে উভয় পক্ষ।

জানা গেছে, কোনো সিন্ডিকেট নয়, এখন থেকে জনশক্তি প্রেরণে লাইসেন্সধারী সব রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে। তবে পুরো প্রক্রিয়া যাতে স্বচ্ছ হয়, সেদিকটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে সরকার।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, এবার মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। মালয়েশিয়া সরকার একটি স্বচ্ছ সিস্টেম চাচ্ছে, আমরাও সেটি চাচ্ছি। তাড়াহুড়া না করে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য দুই পক্ষই কাজ করছে।

তিনি বলেন, জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় সব প্রক্রিয়া শেষেও যেসব শ্রমিক মালয়েশিয়া যেতে পারেননি, তারা নতুন পদ্ধতির আওতায় যেতে পারবেন। তবে এজন্য তাদের আবার নতুন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি নিষ্পত্তি করবে।

জানা গেছে, জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কাজের অনুমতি পেয়েছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে তাদের মাধ্যমে আবেদন করা প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক দেশটিতে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু এ পদ্ধতিতে দেশটিতে প্রবেশের শেষ সময় ছিল ৩১ ডিসেম্বর। বেঁধে দেয়া সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় এসব কর্মীকে পাঠানো সম্ভব হয়নি। ফলে বাতিল হয়ে গেছে এসব শ্রমিকের চাহিদাপত্র। অপেক্ষমাণ এসব শ্রমিককে মালয়েশিয়ায় যেতে হলে পুনরায় নতুন পদ্ধতিতে যেতে হবে।

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত এ সিন্ডিকেটের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি হলো ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, ক্যারিয়ার ওভারসিজ, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, এইচএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স, সানজারি ইন্টারন্যাশনাল, রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল, প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম ও আল ইসলাম ওভারসিজ।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে জিটুজি পদ্ধতিতে কর্মী পাঠাতে মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ১০টি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিকে জিটুজি প্লাসের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের মাধ্যমে ২০১৭ সালে ৯৯ হাজার ৭৮৭ জন বাংলাদেশী শ্রমিক মালয়েশিয়া যান। আর ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৯ জন শ্রমিক পাঠিয়েছে এ ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি।

পরবর্তী সময়ে এসব রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে গত ১৪ আগস্ট এক বিশেষ কমিটির বৈঠকে জিটুজি প্লাস থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। মূলত ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সঙ্গে যুক্ত ছিল মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে গড়া একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বাংলাদেশ অংশে কাজ করেছে এ ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেটটি। এ চক্র ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মীপ্রতি আড়াই থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে।

হঠাৎ করে কর্মী নেয়া বন্ধের সিদ্ধান্তে ১ সেপ্টেম্বরের আগে কাজের অনুমতি পাওয়া ৭০ হাজার কর্মীর মালয়েশিয়ায় গমনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় দুই দেশের মন্ত্রিপর্যায়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল হলেও গত ৩০ আগস্টের আগে যেসব বাংলাদেশী কাজের অনুমতিপত্র পেয়েছেন, তাদের সবাই মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পাবেন। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে জিটুজি সমঝোতায় মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার খরচ নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের জুনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এক অফিস আদেশের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পুরুষ কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করে দেয়। সেখানে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় নির্মাণ বা কারখানা শ্রমিকদের অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ ৬০ হাজার ও কৃষি শ্রমিকের জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণের বিষয়টি জেডব্লিউজির সভায় আলোচনা করে চূড়ান্ত করার কথা জানানো হয়।