মাসুদ উদ্দিনের রাজত্বে এলাকা ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ফেনীতে মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী সাবেক লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর লাঙ্গল প্রতীকের সমর্থকদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। তবে বিএনপি প্রার্থী আকবর হোসেনের ধানের শীষের সমর্থকরা হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা ছাড়া।

জানা গেছে, ফেনী-৩ সংসদীয় আসনের (দাগনভূঞা-সোনাগাজী) ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকদের গণহারে গ্রেফতার ও হামলার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনে অভিযোগ দিয়েছেন ফেনী-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী ও দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আকবর হোসেন।

অভিযোগে প্রার্থী মোহাম্মদ আকবর হোসেন উল্লেখ করেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সরকার ও মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীর উসকানিতে নিজ নিজ থানার পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট এর বিভিন্ন শ্রেণির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।

অভিযোগে তিনি আরো উল্লেখ করেন, মহাজোটের নেতাকর্মীরা তার সমর্থিত নেতাকর্মীদের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে। পুলিশ এসব নিরীহ নেতাকর্মীদের বিভিন্ন নতুন ও গায়েবী মামলায় কারাগারে প্রেরণ করে আসছেন।

এসব নেতাকর্মীর নামে ইতিপূর্বে কোনো মামলা ছিল না বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

ধানের শীষের প্রার্থী আকবর হোসেনের নির্বাচনী সেলের তথ্য অনুযায়ী, জেলা বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক সাইফুর রহমান রতন, দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইফুর রহমান স্বপন ও সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি, সাবেক পৌর মেয়র জামাল উদ্দিন সেন্টু, দাগনভূঞা পৌর যুবদলের সভাপতি হুমায়ুন কবির বাবু, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম জাফর, ছাত্র শিবিরের সাথী নুর মহল ফয়সাল ও প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সমর্থক আলাইয়ারপুর গ্রামের মো. ইউছুফের ছেলে মো. সুরুজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ধানের শীষের প্রার্থী আকবর হোসেনের অভিযোগ, ১৭ ডিসেম্বর সোনাগাজী উপজেলায় চরছান্দিয়া ইউনিয়নের ওলামা বাজারে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে কর্মীদের নিয়ে দাগনভূঞা ফেরার পথে তাকিয়া বাজারস্থ স্থানে লাঙ্গল প্রতীকের সমর্থকরা অতর্কিতে বোমা ফাটিয়ে এবং অস্ত্রশস্ত্রসহ লাঠি-সোটা, রামদা নিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়। হামলাকারীরা আকবর হোসেনের গাড়ীবহরে (ঢাকা-মেট্রো-চ-১৯-১৪৬৩, ঢাকা-মেট্রো-গ-১৩-৬৬৯০, ঢাকা- মেট্রো-চ-৫৬-০১৩৮) হামলা করে। এসময় তাদেরকে বহনকারী ৩টি গাড়ী ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা।

জায়লস্কর ইউনিয়ন কেন্দ্রের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক লোকমান হোসেনকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরা বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে খুশিপুর স্কুলের সামনে গাছে বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তাছাড়া নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে অব্যাহতভাবে ধানের শীষের সমর্থকদের ওপর পুলিশ ও সরকার দলের নেতাকর্মীরা হামলা, মাইক ও পরিবহন ভাংচুর, গণসংযোগে বাধা ও হুমকি-ধামকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ধানের শীষের নেতারা।

নির্বাচন কমিশনে পাঠানো অভিযোগে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আকবর হোসেন উল্লেখ করেন, তফসিল ঘোষণা ও প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে তার নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষের সাধারণ সমর্থক ও নেতাকর্মী মিলে অন্তত ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতদের কেউ কেউ গ্রেফতারের আগে সরকার দলের সমর্থকদের হাতে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত হয়েছেন।

এরা হলেন, দাগনভূঞা উপজেলার সমাসপুর গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে মোহাম্মদ আবু তাহের কালু, কৌশল্যা গ্রামের মো. আবদুর রাজ্জাকের ছেলে মনির হোসেন স্বপন, আবদুল মতিনের ছেলে আবদুল মোতালেব, শরীফপুর গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ, নয়নপুর গ্রামের আবদুল গোরফানের ছেলে নুর নবী শাহিন, রামচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত. ইদ্রিস মিয়ার ছেলে মো. ইউনুস দুলাল, রাজাপুর ৮ নং ওয়ার্ডের জলিল আহমদের ছেলে রহমত উল্লাহ জিংকু, একই গ্রামের মোকলেছুর রহমানের ছেলে আলেক উল্লাহ, জয়নাল আবেদীনের ছেলে নাছির উদ্দিন, জায়লস্কর ইউপির আলামপুর গ্রামের আবদুল ওহাবের ছেলে মিজানুর রহমান,

মোমারিজপুর গ্রামের সুলতান আহমদের ছেলে নুরুল আমিন, জয়নাল আবেদীনের ছেলে জাহেদুল আবেদীন সাগর, মধ্যম চন্ডিপুর গ্রামের আবু আলমের ছেলে দেলোয়ার হোসেন, চন্ডিপুর গ্রামের মমিনুল হকের ছেলে মো. হাসান, হাসান গনিপুরের আবদুল মুনাফের ছেলে হাফেজ শহীদ উল্লা, রামনগর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে এমদাদুল হক, আলাইয়ারপুরের আবদুল সালামের ছেলে আবুল কাশেম, উত্তর চাঁদপুর গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে সাহাব উদ্দিন, নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে দক্ষিণ করিমপুরের হুমায়ুন কবিরের ছেলে আবদুল্লা আল-মামুন রিয়াদ, পূর্ব চন্দ্রপুর মুন্সিবাড়ীর আবদুল হাকিম এর ছেলে ফরহাদ হোসেন, দক্ষিণ করিমপুরের সাবেক ওয়ার্ড মেম্বার নুরুল আমিন, একই গ্রামের হাবিব উল্যাহর ছেলে আনোয়ার হোসেন ভূঞা, উত্তর শ্রীধরপুরের আবদুল মান্নানের ছেলে জামাল উদ্দিন মুছা, দক্ষিন কৌশল্যা গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে মইন উদ্দিন আনোয়ার,

আবদুল নবী গ্রামের মজিবুল হকের ছেলে আবদুল হালিম, গজারিয়া গ্রামের মৃত আবু তাহেরের ছেলে মীর হোসেন, চাঁনপুর গ্রামের মৃত. ওহিদুর রহমানের ছেলে ইসমাঈল হোসেন রিপন, দক্ষিন করিমপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে এরশাদ উল্যাহ পারভেজ, নয়নপুর গ্রামের সফি উল্যাহর ছেলে দ্বীন মোহাম্মদ দীপু, আলাইয়ারপুর গ্রামের আলী আহমদের ছেলে মোহাম্মদ হানিফ, ইয়ার নুরুল্লাপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে আবু সুফিয়ান ও পৌরসভার উদরাজপুর গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে শাহ আলম।

তাছাড়া ১৪ ডিসেম্বর শনিবার বিকালে দরবেশেরহাট বাজারে ধানের শীষের প্রতীকের মাইকিংয়ের সময় মাইক ভাঙচুর, সিন্দুরপুর ইউনিয়নে ৮/১০ লাঙ্গলের সমর্থনকারী মাইক, ব্যাটারি ও যাবতীয় সরঞ্জামাদি ভাঙচুর করে ছিনিয়ে নেয় এবং মাইকম্যান রিয়াদকে মারধর করে আহত করে বলেও অভিযোগ করেছে বিএনপি।

একইদিন বিজয়পুর ও ইয়াকুবপুরে প্রচারণার সময় বিএনপির মাইক ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি বাজারে স্কুলের সামনে প্রচারণার সময় মাইক ভাংচুর এবং অটোরিকশায় হামলা, বাদামতলী, সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নে পোষ্টার ও লিফলেট ছিনিয়ে পুড়িয়ে ফেলা, শাহাপুর ও সোনাপুর বাজারে পোষ্টার ও লিফলেট ছিনিয়ে নেয় লাঙ্গল প্রতীকের সমর্থকরা।

এছাড়া, ১৬ ডিসেম্বর কুঠিরহাট ব্রিজ সংলগ্ন নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করা হয়। দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের অলাতলী বাজারে পোষ্টার ছিঁড়ে আগুন দেয়া ও ককটেল হামলা করে ভয়ভীতি সৃষ্টি করা হয়েছে।

গত ২০ ডিসেম্বর দুপুরে দাগনভূঞা বাজারের জিরো পয়েন্টে মহাজোট প্রার্থীর সমর্থক কর্তৃক ৫টি মাইক ও ৫টি অটোরিকশা ভাংচুর করে এবং এর চালক মুন্সী, সবুজ, ইসমাইল ও মাহফুজ আলমকে মারধর করা হয়।

নয়নপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে নুরুল হুদা লিটন মৌলভী বাজারে সন্ধ্যায় লাঙ্গলের ৫/৬ জন সমর্থক তার উপর হামলা করে এবং তার দোকানের মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় এবং যাওয়ার সময় বাজারে বোমা বিস্ফোরণ করে আতংক সৃষ্টি করে।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৪ ডিসেম্বর গণসংযোগ শেষে বৈরাগীরহাট বাজারে চেয়ারম্যান ও থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ব্যাপক বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সাবেক মেম্বার সেলিমকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।

আমুভূঞার হাট এলাকা থেকে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম পাটোয়ারী এবং যুবদল কর্মী মো. সেলিমকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরা মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। একইদিন আমুভূঞার হাটের নিজস্ব দোকান থেকে আবু সুফিয়ানকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

রাজাপুরের মজিবুল হকের ছেলে আব্দুল হালিম, কৌশল্যার নিজ বাড়ি থেকে আনোয়ার হোসেন ড্রাইভারকে, সিন্দুরপুর ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামের লিটন, জায়লস্কর ইউনিয়ন আহ্বায়ক ও সিলোনীয়া কেন্দ্র কমিটির প্রধান জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও তার খড়ের স্তুপে আগুন দেয় সরকার দলের সমর্থকরা।

একই দিন গজারিয়া বাজারে বিএনপি সমর্থিত ব্যবসায়ী হামিদ ও এনাম মিয়ার দোকানঘরে তল্লাশি চালায় এবং কেরোনীয়া গ্রামের আফ্রিকা প্রবাসী নজরুল ইসলামকে মারধর করে তার মোটর সাইকেলটি ছাত্রলীগ কর্মীরা ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আকবর হোসেন জানান, রিটার্নিং অফিসারকে এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কোনো ফল পাওয়া যায়নি। উল্টো হামলা, মামলা, গ্রেফতার ও হুমকি-ধামকি অব্যাহত রয়েছে।

দাগনভূঞা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ছালেহ আহাম্মদ পাঠান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এবং ওয়ারেন্টভূক্ত ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।–পিবিডি