অবশেষে চট্টগ্রামে হাল ছেড়ে দিলো বিএনপি!

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে অন্তত দুটি আসনে ভোটের আগেই হাল ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। আসনগুলো হচ্ছে, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) এবং চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী)। দুটি আসনেই কার্যত মাঠে নেই বিএনপি। গণসংযোগে পিছিয়ে, নেই পোস্টার-ব্যানারও।

বিএনপির প্রার্থীরা বলছেন, মামলা-হামলা এবং বাধার কারণে তারা গণসংযোগ করতে পারছেন না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, নৌকার পক্ষে গণজোয়ার দেখে বিএনপির প্রার্থীরা মাঠ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।

দুই আসনে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীই চট্টগ্রামের রাজনীতিতে প্রভাবশালী। রাউজানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন বিএনপির জসীম উদ্দিন সিকদার।

তিনবারের সংসদ সদস্য ফজলে করিম ২০০১ সালে প্রথমবার নির্বাচিত হন। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদেরকে বারবার হারিয়েছেন তিনি। ঋণখেলাপী হওয়ায় এবার গিয়াসউদ্দিন কাদের নির্বাচন করতে পারছেন না। তার বদলে বিএনপি প্রার্থী করেছে ২০০৮ সালে রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জামানত হারানো জসিম উদ্দিন সিকদারকে।

জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর প্রথমদিকে বিএনপি প্রার্থী জসীম উদ্দিন সিকদার এলাকায় প্রচারণা শুরু করেছিলেন। পৌর সদর এলাকায় ফজলে করিমের সঙ্গে মুখোমুখিও হয়ে দুজনেই সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে কথা বলেন। এরপর আরও ২-৩ দিন পুরোদমে প্রচারণা চালিয়ে গেলেও গত এক সপ্তাহ ধরে জসীম উদ্দিন সিকদারকে আর এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে গেলেও ঘরোয়া বৈঠকের পরই এলাকা ছাড়ছেন তিনি। রাউজানের বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেও ভোটের কোনো উৎসাহ নেই।

স্থানীয়রা বলছেন, রাউজানের ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কোথাও ধানের শীষের একটি পোস্টারও নেই। যেখানে ব্যানার-পোস্টার লাগানোই হয়নি, সেখানে ছেঁড়ার অভিযোগ পাবার প্রশ্নই আসে না। রাউজানে প্রচারণা শুরুর পর কোনো রাজনৈতিক সংঘাত কিংবা প্রচারণায় বাধার খবর আমরা পাইনি। এরপরও বিএনপির প্রার্থীকে গণসংযোগে দেখা যাচ্ছে না।

তবে, জসীম উদ্দিন সিকদারের দাবি, তিনি প্রতিদিন এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করছেন। তার অভিযোগ এলাকায় গণসংযোগে তিনি হামলার শিকার হচ্ছেন। তার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।

হাল ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশ্নই আসে না। আমি রাউজানের মাঠে আছি। আমি হাল ছাড়িনি। আমার মধ্যে কোন ভয়-আতঙ্ক নেই। আমার নেতাকর্মীদের মধ্যে আছে। তবে মানুষ যদি ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে, আমি জয়ী হব।

চট্টগ্রাম-১৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে বর্তমান সংসদ সদস্য ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে জাবেদ ওই আসন থেকে দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন তিনবারের সংসদ সদস্য ও পাঁচবার মনোনয়ন পাওয়া বিএনপি নেতা সরওয়ার জামাল নিজাম। দুজনই চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি।

গণসংযোগে নেমে জাবেদ আনোয়ারা-কর্ণফুলী এলাকার গ্রামে গ্রামে ঘুরলেও সরওয়ার জামাল নিজামের তৎপরতা দৃশ্যমান নয় বলে জানিয়েছেন খোদ বিএনপির রাজনীতিতে জড়িতরাই। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ভোটের মাঠে তেমন সিরিয়াসও নন এই প্রার্থী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা জানান, আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর গত ১৪ ডিসেম্বর আনোয়ারা উপজেলার বরুমছড়া এলাকায় একঘণ্টা এবং ১০ দিন পর ২৪ ডিসেম্বর বটতলী এলাকায় গিয়ে আরেক দফা প্রচারণা চালান। এই আসনে বিএনপির ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত কর্ণফুলী উপজেলায় প্রচারণাই চালাননি তিনি। এছাড়া, দুই উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে নগরীর বাসায় কয়েক দফা বৈঠক করলেও তাদের প্রচারণার জন্য কোনো টাকাও দেননি। এলাকায় পোস্টার-ব্যানারও তেমন নেই সরওয়ার জামাল নিজামের।

স্থানীয় বিএনপির আরেক নেতা বলেন, সরওয়ার জামাল নিজাম সাহেব নির্বাচন করতে আগ্রহী ছিলেন না। কারণ, গত ১০ বছর ধরে কার্যত বিএনপির রাজনীতিতে তিনি নিস্ক্রিয় ছিলেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না। এরপরও যখন তাকে মনোনয়ন দেওয়া হল, দলের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি না করতে তিনি সেটা গ্রহণ করেন। তবে ভোট করতে তিনি খুব একটা আগ্রহী নন।

এ প্রসঙ্গে জামাল নিজাম বলেন, সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেও নির্বাচনের মাঠে আছি। আমার সঙ্গে জনগণ আছে। নেতাকর্মীরাও ঐক্যবদ্ধভাবে আমার সঙ্গে আছেন। কিন্তু নির্বাচনের পরিবেশ এমন যে, টিকে থাকা কষ্টকর। তবে মাঠ ছাড়ব না। ভোটের দিন পর্যন্ত দেখব।